তুরস্ক বানাম মিশর কে বেশি শক্তিশালী। তুরস্ক মিশর যুদ্ধ
তুরস্ক এবং মিশর বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের সবথেকে শক্তিধর সামরিক রাষ্ট্র৷ গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার 2020 সালের রেংকিংয়ে সামরিক শক্তিতে মিশরের অবস্থান ৯ নাম্বারে৷ অপরদিকে তুরস্ক মিশরের থেকে দুই ধাপ পিছনে ১১ নাম্বারে অবস্থান করছে৷ লিবিয়া ইসুতে সমস্ত শক্তি নিয়ে এই দুই দেশ যুদ্ধের মুখে দাড়িয়ে আছে৷ যদি তুরস্ক আর মিশরের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত কি ঘটবে? লিবিয়াকে নিয়ে তুরস্ক মিশর যুদ্ধের ময়দানে। তুরস্ক বানাম মিশর কে বেশি শক্তিশালী। তুরস্ক মিশর যুদ্ধ। টেক দুনিয়া
তুরস্ক এবং মিশর দুই দেশের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে৷ অতীতে তুরস্ক অটোমান বা উসমানীয় সম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল৷ ফলে সম্পদ আর সামরিক শক্তিতে তারা অনেক এগিয়ে৷ এদিক মিশরের ইতিহাস আরও বেশি সমৃদ্ধ৷ মিশরের নীল নদের তীরে ফারাও বা ফেরাউন শাসকদের মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল৷ ফলে প্রাচীনকাল থেকে মিশরীয়রা অনেক উন্নত জাতি৷
সৈন্য সংখ্যায় মিশর তুরস্কের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে৷ মিশরের সক্রিয় সামরিক সদস্য সংখ্যা ৪ লাখ ৪০ হাজার৷ রিজার্ভে আছে আরও ৪ লাখ ৮০ হাজার৷techduniyabd
বিপরীতে তুরস্কের সামরিক সদস্য সংখ্যা ৩ লাখ ৫৫ হাজার৷ রিজার্ভে আছে ৩ লাখ ৮০ হাজার৷
তুরস্কের হাতে ট্যাংক আছে ২৬০০টি৷ তবে মিশরের সাথে লড়াই করার মতো শক্তিশালী ট্যাংক আছে ৬০০টি জার্মানির তৈরী লিওপার্ড ২ মেইন ব্যাটল ট্যাংক এবং নিজেদের ১০টি আল্টাই ট্যাংক৷ কেননা বাকি ট্যাংকগুলো পুরনো জার্মানির তৈরী লিওপার্ড ১ এবং আমেরিকা ও ইসরায়েল থেকে কেনা প্যাটন৷
বিপরীতে প্রায় ৪৩০০ ট্যাংক নিয়ে তুলনামুলক শক্ত অবস্থানে আছে মিশর৷ মিশরের কাছে আমেরিকার সর্বাধুনিক M1 Abrams ট্যাংক আছে সাড়ে ১৩শ উপরে৷ এগুলোর ৯০% মিশরেই তৈরী৷ সাথে রাশিয়ার সর্বাধুনিক T 90 ট্যাংক আছে ৫০০টি৷ অর্থাৎ মিশরের হাতে আমেরিকা এবং রাশিয়া দুই দেশেরই সবথেকে শক্তিশালী ট্যাংকগুলো বিপুল পরিমানে রয়েছে৷ এছাড়াও মিশরের কাছে রাশিয়ার T 80, T 62, T 55, আমেরিকার তৈরী M60 প্যাটোন এবং মিশরের নিজেদের তৈরী রামেসিস 2 ট্যাংক আছে৷
এবারে আসি বিমান বাহিনী তুলনায়৷ তুরস্কের হাতে মোট বিমান আছে ১ হাজারের উপরে৷ এর মধ্যে ফাইটার বিমান হিসেবে আছে ২৪৫টি F 16. এগুলোর সাথে আছে কয়েক দশক আগের পুরনো F 4 phantom যুদ্ধ বিমান৷ তুরস্কের হাতে তাদের নিজেদের তৈরী T 129 এ্যাটাক হেলিকপ্টার আছে ৫৬টি৷ এগুলো ইতালির A 129 ম্যাংগুস্তা হেলিকপ্টার কপি৷ এছাড়াও আমেরিকান কোবরা এবং সুপার কোবরা আছে ৪৪টি৷
তবে তুরস্কের শক্তির অন্যতম জায়গা হচ্ছে তাদের এ্যাটাক ড্রোনগুলো৷ ১২০টি এ্যাটাক ড্রোন আছে তুরস্কের হাতে৷
পুরো ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
এদিকে মিশরের হাতে রয়েছে মুসলিম বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যের সবথেকে শক্তিশালী বিমান বাহিনী৷ বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা মাল্টিরোল ফাইটার বিমান ডাসল্ট রাফাল আছে ২৪টি৷ তুরস্কের প্রধান যে অবলম্বন F 16 সেগুলোও মিশরের কাছে আছে ২২০টি, অর্থাৎ প্রায় তুরস্কের সমান৷ F 16 এর রাশিয়ান প্রতিদন্দী Mig 29 বিমান আছে ৪৪টি৷ এগুলোর পাশাপাশি ফ্রান্সের তৈরী মিরেজ 5 এবং মিরেজ 2000 ফাইটার বিমান আছে ১০০টি৷ এছাড়াও রাশিয়ার তৈরী ২৪টি ভয়ংকর ফাইটার Su 35 কেনার চুক্ত করেছে মিশর৷ এগুলো যে কোন সময় যুক্ত হতে পারে৷
মিশরের এ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলো উল্লেখ করার মতো৷ আমেরিকার তৈরী এ্যাপাচি হেলিকপ্টার আছে ৪৬টি৷ আবার রাশিয়ার সর্বাধুনিক Ka 52 আছে ৩৫টি৷ এছাড়াও রাশিয়ার আরেকটি এ্যাটাক হেলিকপ্টার Mi 24 আছে অজানা সংখ্যক৷ বিশ্বের আর কোন দেশের বহরে এরকম বৈচিত্রময় এ্যাটাক হেলিকপ্টার নেই৷
সেনা এবং বিমানের মতো নৌ শক্তিতেও মিশরের চেয়ে তুরস্ক অনেক পিছিয়ে৷ মিশরের হাতে দুটি হেলিকপ্টারবাহী মিস্ট্রাল ক্লাস জাহাজ আছে৷ এগুলো হলো গামাল আব্দেল নাসের এবং আনোয়ার এল সাদাত৷ এগুলোর প্রতিটি ডজনখানেক এ্যাটাক হেলিকপ্টার বহন করতে পারে৷ এছাড়াও এগুলোর ডেকে করে সৈন্য এবং ট্যাংকসহ অন্যান্য ভারী অস্ত্র বহন করা যায়৷ তুরস্কের কাছে এরকম কিছুই নেই৷ মিশরের কাছে এ্যাটাক সাবমেরিন আছে ৮টি৷ তুরস্কের কাছে আছে ১২টি৷ দুই দেশের সাবমেরিনগুলোই প্রায় সমান ক্ষমতাসম্পন্ন৷
মিশরের কাছে ফ্রিগেট জাহাজ আছে ৭টি এবং করভেট জাহাজ আছে ৭টি৷ অপরদিকে তুরস্কের কাছে ফ্রিগেট জাহাজ আছে ১৬টি এবং করভেট জাহাজ আছে ১০টি৷
মিশরের মোট নৌযান সংখ্যা ৩১৬টি এবং তুরস্কের ১৪৯টি৷
মিশর এবং তুরস্ক দুই দেশই ভুমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত৷ তবে মিশরের জন্য একটা বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সুয়েজ খাল তাদের মালিকানাধীন৷ গোটা পৃথিবীর ব্যবসা বাণিজ্য এই খালের উপর নির্ভরশীল৷
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুরস্কের সাথে রাশিয়াসহ বেশকিছু প্রভাবশালী দেশের তিক্ত সম্পর্ক রয়েছে৷ অপরদিকে মিশরের সাথে বর্তমানে আমেরিকা রাশিয়া চীনসহ সকল প্রভাবশালী দেশগুলোর সুসম্পর্ক রয়েছে৷ এছাড়াও তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগান গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত৷ যুদ্ধে জড়ানোসহ যেকোন কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা তার জন্য অনেকটাই কঠিন৷ অপরদিকে মিশরের সেনা শাসক সিসির উপরে ঘরোয়া কোন চাপ নেই৷ প্রিয় দর্শক, লিবিয়া ইসুতে মুসলিম বিশ্বের সবথেকে ক্ষমতাধর এই দুই দেশের মুখোমুখি যুদ্ধ হলে কি ঘটতে পারে? এবং আপনি কোন দেশটিকে সমর্থন করবেন? আপনার মতামত কমেন্টে জানা৷