মেইন ব্যাটল ট্যাংক কিনছে বাংলাদেশ
MBT-2000 হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যবহৃত সবথেকে শক্তিশালী মেইন ব্যাটল ট্যাংক। এটি একটি হেভি ট্যাংক৷ এটাকে চীন এবং পাকিস্তানের যৌথভাবে তৈরি করেছে।
MBT-2000 ট্যাংক ৯০ এর দশকে চীনের Norinco এবং পাকিস্তানের Heavy Industries Taxila কোম্পানি মিলে যৌথ উদ্যগে ডিজাইন করে। তবে এটির প্রডাকশান চালু হয় ২০০১ সাল থেকে। এই ট্যাংক কম্পোজিট আরমর দ্বারা সুরক্ষিত৷ বিশেষ সুরক্ষা হিসেবে RHA এবং ERA ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যসব রাশিয়ান বিা চীনা ট্যাংকের মতো এই ট্যাংকেও প্রধান অস্ত্র হিসেবে রয়েছে একটি 125mm Smooth bore Gun.
এছাড়াও সেকেন্ডারি আর্মানেন্ট বা সাপোর্ট গান হিসেবে রয়েছে একটি .50 caliber AA মেশিনগান এবং 7.62mm এর Coaxial Machine Gun.
MBT-2000 ট্যাংকটি উচ্চতায় ৭.১০ ফিট৷ এটা চওড়ায় ১১.৬ ফিট এবং লম্বায় ৩৩ ফিট। ট্যাংকটির ওজন ৪৬টন।
আসুন দেখি ট্যাংকটির আর্মামেন্টগুলোর ক্ষমতা কতো৷
MBT-2000 এর মেইনগান হিসেবে যে অটো-লোডিং 125mm Smooth Bore Gun ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা ক্রোম প্লেটেড। এর ফলে গানটি অত্যন্ত উন্নত করে তৈরী করা সম্ভব হয়েছে। এই গানটি বিভিন্ন ধরনের গোলা ফায়ার করতে পারে৷ এর মধ্যে Kinetic Energy Penetrator, High Explosive Anti Tank Warhead এবং Explosive Material রয়েছে৷ পাশাপাশি শত্রুর ট্যাংক ধ্বংসের জন্য এটা Laser Guided Anti-Tank Missile ফায়ার করতে পারে। এটির মেইনগান একসাথে ৩৯টি গোলা বহন করতে পারে। সাপোর্টগান হিসেবে রয়েছে 7.62mm Coaxial Machine Gun৷ এটা ট্যাংকের সামনে অবস্থিত৷ শত্রুর ইনফ্যান্ট্রি ইউনিটের বিরুদ্ধে মেশিনগানটি ব্যবহৃত হয়। এটি ৫০০রাউন্ড বহন করতে পারে। এছাড়াও এতে একটি .50 caliber AA (Anti-Aircraft) গান মাউন্ট করা রয়েছে যা হেভি টার্গেট এবং পেছন থেকে ট্যাংককে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হয়। এমনকি এটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতেও সক্ষম। টাংকের গানারের ব্যবহারের জন্য রয়েছে একটি Dual Magnification Sight৷ আর কমান্ডারের জন্য রয়েছে প্যানোরমিক সাইট যার সাহায্যে কমান্ডার স্বাধীনভাবে ট্যাংকের সব দিকেই নজর রাখতে পারেন। ট্যাংকটির উভয় দিকেই Independent Laser Range finder সংযুক্ত রয়েছে। ট্যাংকটির রয়েছে Hunter Killer Capability যার সাহায্যে ট্যাংকটি টারগেট ট্র্যাক করতে সক্ষম৷ এমনকি যখন ট্যাংক এবং টারগেট উভয়ই চলন্ত অবস্থায় রয়েছে তখনও এটা টার্গেটকে ট্রাক করতে পারবে। ট্যাংকটিতে Night Vision এবং Thermal Imaging Device সংযুক্ত রয়েছে। উভয় সাইটেই Integrated Fire Control system রয়েছে। ট্যাংকটির গানের ইফেক্টিভ রেঞ্জ ২০০ থেকে ৭,০০০ মিটার৷ আর Laser Sensor এর ইফেক্টিভ রেঞ্জ ২০০ থেকে ৯,৯৯০ মিটার।
এতে রয়েছে অটোমেটিক ট্রান্সমিশন। সাস্পেনশনের জন্য Torsion Bar এবং Hydraulic Dampers ব্যবহার করা হয়েছে। ১৩শ হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিনটি এটাকে সর্বোচ্চ ৭২কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগ দিতে পারে৷ ট্যাংকটির অপারেশনাল রেঞ্জ ৫০০কিলোমিটার। MBT-2000 এর ক্রু সংখ্যা ৩জন৷ এরা হচ্ছে কমান্ডার, গানার এবং চালক। এটির মেইনগান অটো লোডেড হওয়ায় লোডার প্রয়োজন হয় না।
এবারে আসি ট্যাংকটির বডি কতটা শক্তিশালী সে ব্যাখায়৷
MBT-2000 এ রয়েছে Modular Composite Armour এবং Explosive Reactive Armour (ERA)। এটিতে উন্নত প্রযুক্তির পারমাণবিক-জৈবিক-রাসায়নিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। আরও আছে Thermal Smoke Generator এবং Explosion Suppression System. ট্যাংকটির ইনফ্রারেড সিগনেচার একটি ইনফ্রারেড রিফ্লেক্টর কোটিং দ্বারা কমানো হয়েছে৷ যার ফলে এটি সহজে শত্রুর ইনফ্রারেড স্ক্যানারে ধরা পড়ে না। MBT-2000 ট্যাংকে নতুন ডিজাইনের AORAK Mk2 Explosive Reactive Armour সংযুক্ত করা হয়েছে যা APFSDS, HEAT এবং HE-FS থেকে ট্যাংকটিকে রক্ষা করতে পারে৷
এবারে আসি দামের ব্যপারে৷ আসলে সমরাস্ত্রের ক্রয় বিক্রয় চুক্তি অনেক গোপন বিষয়৷ তাই প্রকৃত দাম কতো তা জানা সম্ভব হয় না৷ তবে চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার দেওয়া তথ্য মতে একেকটি ট্যাংকের দাম ৪.৭ মিলিয়ন থেকে ৫.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে৷ অর্থাৎ একটি ট্যাংক কিনতেই খরচ হবে ৪০ থেকে ৫০ কোটি বাংলাদেশি টাকা৷ তবে পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০১১ সালে ১৬২ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে ৪৪টি ট্যাংক এবং আরও কিছু আর্মার্ড রিকভারি ভেহিকল কিনে৷ এতে করে প্রতিটি ট্যাংকের মূল্য দ্বারায় সাড়ে ৩ মিলিয়ন ডলারের কিছুটা বেশি৷
সবশেষে আসি, বাংলাদেশের জন্য এগুলো কেনার কারন কি৷ প্রধান কারন হিসেবে বলা যেতে পারে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে চলাচলের উপযোগী এগুলো৷ এছাড়াও দাম এবং চীনের সাথে সামরিক সম্পর্কও একটা ইস্যু৷ যদিও এগুলো কেনার পিছনে কারন সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞরাই সবথেকে ভালো বুঝেন৷
প্রিয় দর্শক, আপনার মতে এই ট্যাংকগুলোর ক্ষমতা এবং কার্যকারিতা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটা উপযুক্ত?