অন্যান্যদেশ পরিচিতিসব দেশ একসাথে

ভিয়েতনাম এত উন্নত হলো কিভাবে। ভিয়েতনাম দেশ পরিচিতি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবথেকে ভয়াবহ যুদ্ধ হচ্ছে ভিয়েতনাম যুদ্ধ৷ ধারনা করা হয় এই যুদ্ধে প্রায় ৪২ লাখ মানুষ মারা গিয়েছে৷ টেক দুনিয়া এটাকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বললেও ভুল হবে না৷ কেননা আমেরিকা, চীন সোভিয়েত ইউনিয়ন দুই কোরিয়াসহ সকল পরাশক্তি দেশগুলোই এখানে যুদ্ধে জড়িয়ে পরে৷ বোমা বর্ষনের দিক থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকেও হার মানায় ভিয়েতনাম যুদ্ধ৷ পারমানবিক বোমা বাদে এমন কোন আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নেই যার প্রয়োগ ভিয়েতনামে করা হয়নি৷ অথচ তারপরও ভিয়েতনাম অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাড়িয়েছে৷ কৃষি নির্ভর হওয়া সত্তেও প্রযুক্তিতে উন্নতির কারনে তাদের বলা হচ্ছে ভবিষ্যৎ সিঙ্গাপুর৷ ইতোমধ্যেই স্যামসাং, টশিবা এবং ইন্টেলসহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান ভিয়েতনামে ইলেক্ট্রনিক্স পন্য উৎপাদন শুরু করেছে৷ এমনকি দ্রুতই ভিয়েতনাম তেল রপ্তানীকারক দেশ হয়েও উঠেছে৷ বাংলাদেশের সাথে সবথেকে বেশি মিল থাকা এই দেশটি সম্পর্কে আরও সব বিস্ময়কর তথ্য জানতে পুরো ভিডিওটির শেষ পর্যন্ত দেখুন৷

ভিয়েতনামের অবস্থান দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে৷ চীন, কম্বোডিয়া এবং লাওস এই তিন দেশের সাথে ভিয়েতনামের বর্ডার আছে৷ তবে থাইল্যান্ড, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন তাদের বেশ কাছাকাছি দেশ৷

বাংলাদেশের সাথে ভিয়েতনামের অনেক মিল আছে৷ বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম দুই দেশই কৃষিপ্রধান দেশ৷ আবার দুই দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত৷ গার্মেন্টস শিল্পে দুই দেশের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই৷ আবার ৭০ এর দশকে বিদেশী শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে দুই দেশেই যুদ্ধবিধ্বস্ত ছিল৷ সেই অবস্থা থেকে দুই দেশ একই সাথে অকল্পনীয় উন্নতি করেছে৷ তবে বাংলাদেশের থেকে ভিয়েতনামের উন্নতিটা অনেক বেশি৷

ভিয়েতনামের আয়তন ৩৩১২১২ বর্গ কিলোমিটার৷ মোট জনসংখ্যা সাড়ে ৯ কোটি৷ জনসংখ্যায় পৃথিবীতে ১৫তম৷ নমিনাল জিডিপি ২৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর মাথাপিছু আয় ২৭৪০ ডলার৷ পেশায় অধিকাংশ মানুষ হয় কৃষক নয়তো শ্রমিক৷ ৮০% মানুষ কোন ধর্মে বিশ্বাসী নয়৷ তবে ৯% বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী এবং ৭% ক্যাথলিক খ্রিস্টান৷ সামরিক শক্তিতেও তারা অনেক এগিয়ে৷ পৌনে পাঁচ লাখ সৈন্য নিয়ে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের রেংকিংয়ে তাদের অবস্থান ২২ নাম্বারে৷ এমনকি তারা বিপুল পরিমান সুখোই Su 30 ফাইটার বিমান কিংবা Mi 24 এ্যাটাক হেলিকপ্টারকে তাদের বহরে রেখেছে৷

দেশটির রাজধানী হচ্ছে উত্তরাঞ্চলীয় শহর হ্যানয়৷ তবে তবথেকে বড় শহর দক্ষিনের হো চিন মিন সিটি৷

অতীতে ভিয়েতনামের অর্থনীতি পুরোপুরি কৃষি নির্ভর ছিল৷ বর্তমানেও তারা কফি এবং ড্রাগন ফল রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ বাংলাদেশেও অনেক কৃষি পণ্য ভিয়েতনাম থেকে আসতো৷

তবে সম্প্রতিক সময়ে তারা ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে অনেক উন্নতি করেছে৷ মোট রপ্তানি আয়ের ৪০% আসে প্রযুক্তিখাত থেকে৷ ফলে দ্রুতই বর্ধিত হচ্ছে তাদের অর্থনীতি৷ বর্তমানে স্যামসাং, টশিবা এবং ইন্টেলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে করখানা খুলে পণ্য উৎপাদন করছে৷ আমাদের দেশের অধিকাংশ স্যামসাং মোবাইল ভিয়েতনামে তৈরী৷

ভিয়েতনামিদের খাদ্যভ্যাস আমাদের মতোই৷ অধিকাংশ মানুষ ভাত খায়৷ তবে কিছু কিছু মানুষ বুনো প্রাণী, সাপ এবং কুকুরের মাংসও খায়৷

ভিয়েতনামিরা মাথায় এক ধরনের হ্যাট পরে৷ এটা তাদেরকে সূর্যের তাপ, গাছ থেকে মাথায় নাড়কেল পরা এবং সাপের কামড় থেকে বাঁচায়৷ এছাড়াও তারা মুখে মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ায় ফর্সা হওয়ার জন্য৷

পর্যটন শিল্পেও তারা অনেক এগিয়ে৷ বছরে এক কোটির উপরে পর্যটক বেড়াতে যায় সেখানে৷ তবে থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইনের মতো যৌন ব্যবসাকে বৈধতা দেয়নি তারা৷ থাইল্যান্ডের থেকে কম খরচেই আপনি ঘুরে আসতে পারেন ভিয়েতনাম থেকে৷

ভিয়েতনাম আমেরিকার হাতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়া একটি দেশ৷ বোমার আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে তাদের পুরো ভুখন্ড৷ এক সময় আমেরিকানরা ভিয়েতনামিদের কাছে লজ্জাজনকভাবে হেরে পালিয়ে যায়৷ কিন্তু ক্ষত রেখে যায়৷ তারপরও ভিয়েতনামিরা তাদের পরিশ্রম এবং প্রকৃতির আশির্বাদে শক্তিশালী অর্থনীতি তৈরী করেছে৷
প্রিয় দর্শক, আপনার কি মনে হয়ে ভিয়েতনামের কাছে শিক্ষা নিয়ে তাদেরকে অনুসরন করা উচিৎ বাংলাদেশের?

Tags
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close