ড্রোনতুরস্কমিসাইলযুদ্ধ বিমানসামরিকশক্তি

বিশ্বের প্রথম পারমানবিক ড্রোন আবিস্কার করল তুরস্ক। তুর্কী ড্রোন

ড্রোন প্রযুক্তিতে তুরস্ক শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি৷ তুরস্কের তৈরী এ্যাটাক ড্রোনগুলো চলমান যুদ্ধের মাঠে সবথেকে  সফল৷ বিশেষ করে সিরিয়া এবং লিবিয়াতে রাশিয়া এবং ফ্রান্সের মতো পরাশক্তির বিরুদ্ধেও তুরস্ক এই ড্রোনগুলো দিয়ে সফলতা পাচ্ছে৷ তুরস্কের প্রধান দুটি কমব্যাট ড্রোনের একটি হচ্ছে বায়রাক্তার TB 2 ড্রোন৷ ড্রোনটি তৈরী করেছে এরদোগানের মেয়ে জামাই সেলকাক বায়রাক্তার৷ কিন্তু বায়ারাক্তার এবার এর থেকেও আরও বড় এবং শক্তিশালী ড্রোন তৈরী করছে৷ এর নাম হচ্ছে Bayraktar Akinci dron. ভয়ংকর ব্যপার হচ্ছে, এটাই বিশ্বের প্রথম ড্রোন যেটা পারমানবিক হামলা করতে সক্ষম হবে৷ কিন্তু কত বড় হবে এই ড্রোনটি? কতটাই বা ক্ষমতাবান হবে? আমাদের আজকের এই ভিডিওটিতে ড্রোনটির আকার, গতি, রেঞ্জ, অস্ত্রবহন ক্ষমতা এবং কবে নাগাদ সার্ভিসে আসবে তাই আলোচনা করবে৷ Tech Duniya

বায়রাক্তার আকিনসি হচ্ছে High Altitude Long-endurance কমব্যাট ড্রোন৷ অর্থাৎ এটা অনেক উচু দিয়ে উড়ে হামলা চালাতে পারে৷ সেই সাথে দীর্ঘক্ষণ আকাশে উড়তে পারে৷ ড্রোনটিকে নির্মান করেছে বায়রাক্তার মাকিনা কোম্পানী৷ ড্রোনটি নির্মানে সফলতার অন্যতম অংশিদার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের মেয়ে জামাই সেলকুক বায়রাক্তার৷ তুরস্কের বর্তমান প্রধান কমব্যাট ড্রোন বায়রাক্তার TB2 নির্মানে তার বড় অবদান রয়েছে৷ মুলত TB 2 ড্রোনের সাফল্যেই তাকে আরও বড় এই ঐতিহাসিক ড্রোনটি নির্মানে সাহস যুগিয়েছে৷

এটা বিশ্বের অন্যতম বৃহদ্বাকার ড্রোন৷ বিশ্বের প্রথম ড্রোন হিসেবে এটা এয়ারলঞ্চড ক্রুইজ মিসাইল নিক্ষেপের ক্ষমতা রাখে৷ যার মধ্যামে পারমানবিক হামলা করা সম্ভব হবে৷ টেক দুনিয়া

চলুন দেখে নেওয়া যাক ড্রোনটি আকার আকৃতি সম্পর্কে৷ লম্বায় এটা ৩৯.৪ ফিট৷ আর দুই ডানার মাঝের দূরত্ব ৬৫.৬ ফিট৷ মাটি থেকে এর উচ্চতা ১৩ ফিট৷ এতো বিশালাকৃতির হওয়ায় সাড়ে ৫ হাজার কেজি ওজন নিয়ে ড্রোনটি আকাশে উড়তে পারে৷

এবারে চলুন ড্রোনটির গতি এবং রেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত জানা যাক৷ ড্রোনটির দুই ডানায় রয়েছে দুটি AI 450 টার্বোপ্রোপ ইঞ্জিন৷ এগুলো ইউক্রেনের ইভশেঙ্কো প্রোগ্রেসের তৈরী৷ প্রতিটি ইঞ্জিনের ক্ষমতা ৭৫০ হর্স পাওয়ার৷ অর্থাৎ ড্রোনটি আকাশে উড়তে ১৫০০ হর্সপাওয়ার শক্তি ব্যয় করে৷ এই পরিমান শক্তি দিয়ে ড্রোনটি ঘন্টায় ৩৬০ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে৷ একটা ড্রোনের জন্য এই গতি অনেক বেশি৷ এটা মাটি থেকে সর্বচ্চ ৪০ হাজার ফিট উচু দিয়ে উড়তে পারে৷ এটার Endurance ধরা হয়েছে ২৪ ঘন্টা৷ অর্থাৎ এটা একটানা ২৪ ঘন্টা আকাশে উড়তে পারে৷ তবে এটার Endurance আরও বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চাচ্ছেন তুর্কি গবেষকরা৷ ড্রোনটির রেঞ্জ কত তা নিয়ে অফিসিয়ালি কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি৷

এবারে আসি কি কি অস্ত্র বহন করতে পারে ড্রোনটি সেই বর্ণনায়৷ এটা বিশালাকৃতির ড্রোন৷ ড্রোনটিতে হার্ডপয়েন্ট আছে ৬টি৷ মোট ৭ ধরনের মিসাইল বহন করতে পারে ড্রোনটি৷ এর মধ্যে আছে কম খরচের MAM-L, MAM-C এবং CIRIT মিসাইল৷ এগুলো রকেটসান কোম্পানির তৈরী৷ তবে ড্রোনটির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হচ্ছে UMTAS এন্টি ট্যাংক মিসাইল৷ রকেটসানের তৈরী এই মিসাইলটি ট্যাংক ধ্বংসের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ যেকোন ট্যাংকের জন্য এটা এক ভয়ংকর আতংক৷ মিসাইলটি নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে এই মিসাইলের  উপর আমাদের চ্যানেলের ভিডিওটি দেখুন৷

বায়রাক্তার আকিনসি একটা ড্রোন হওয়া সত্তেও এয়ার টু এয়ার মিসাইল বহন করে! অর্থাৎ এটা আকাশে শত্রুর বিমান কিংবা হেসিকপ্টার ধ্বংসের ক্ষমতা রাখে! বিষয়টা সত্যিই আশ্চর্যের৷ দুই ধরনের এয়ার টু এয়ার মিসাইল বহন করতে পারে ড্রোনটি৷ এগুলো হচ্ছে গোকদোগান বা পেরেগ্রিন এবং বোজদোগান বা মার্লিন৷ এর মধ্যে গোকদোগান এক্টিভ রাডার বিভিআর মিসাইল৷ ড্রোনটির সবথেকে হতবাক করা বিষয় হচ্ছে, এটাই বিশ্বের প্রথম ড্রোন যেটা এয়ার লঞ্চড ক্রুইজ মিসাইল নিক্ষেপ করতে পারে৷ বর্তমানে এটা রকেটসানের SOM ক্রুইজ মিসাইল টেস্টিংয়ের পর্যায়ে আছে৷ SOM এর মতো যেসসব ক্রুইজ মিসাইল পারমানবিক ওয়ারহেড বহন করে, সেগুলোর দ্বারা ভবিষ্যতে পারমানবিক হামলারও উপযোগী করে তোলা সম্ভব ড্রোনটিকে৷ যদিও তুরস্কের নিজস্ব কোন পারমানবিক অস্ত্র নেই৷techduniyabd

মিসাইল ছাড়াও ড্রোনটি মার্ক সিরিজের ৩টি সহ ৬ ধরনের বোমা বহন করতে পারে৷

এবারে আসি ড্রোনটি এভিয়নিক্স এবং কমিউনিকেশনসের ব্যপারে৷ ড্রোনটিতে ৩ ধরনের এভিয়োনিক্স যুক্ত করা আছে৷ এদের মধ্যে প্রধান রাডার হিসেবে আছে National AESA Radar. এটি খুবই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন৷ এর পাশাপাশি আসেলসানের তৈরী কমন এ্যাপার্চার টার্গেটিং সিস্টেম যুক্ত করা আছে৷ এর মাধ্যমে চলন্ত বস্তুকেও হামলার জন্য লক করতে পারে ড্রোনটি৷ পাশাপাশি একটি ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার পড যুক্ত করা আছে৷ এভিয়োনিক্সের দিক থেকে ড্রোনটিকে একটি ফাইটার বিমানের সমতুল্যই বলা যায়৷

আসুন জেনে নেই ড্রোননটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় কিভাবে৷ এটা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বায়রাক্তার TB 2 ড্রোনের মতোই৷ তবে এটায় অনেক অটোনোমাস সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে৷ ফলে ড্রোনটি একটি রোবটের মতো নিজেই নিজের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে৷ এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেকঅফ  এবং ল্যান্ড করে৷ এর জন্য রানওয়ে নির্দিষ্ট করা থাকে৷ আর এই রানওয়েটির ভৌগলিক অবস্থান ড্রোনটির প্রোগ্রামে দেওয়া থাকে৷ যদি কখনও কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে ড্রোনটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, তখন জিপিএস ব্যবহার করে ড্রোনটি নিজে নিজেই রানওয়েতে ফিরে আসতে পারে৷

ড্রোনটি বিশালকৃতি এবং অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় এর পিছনে ব্যয় অনেক বেশি হতে পারে৷ তবে ড্রোনটি দামের ব্যপারে অফিসিয়ালি বা আনঅফিসিয়ালি কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি৷ তবে এটা ঠিক যে তুরস্ক অনেক কম খরচে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন অস্ত্র নির্মান করে৷ এর পূর্বের TB 2 ড্রোনটির মূল্য ছিল ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৬০ কোটি বাংলাদেশি টাকা৷

এবারে আসি ড্রোনটি কবে নাগাদ সার্ভিসে আসবে সে বিষয়ে৷ ড্রোনটি নির্মানের কাজ কবে শুরু তা জানা যায়নি৷ কেননা অনেকটা গোপনেই ড্রোনটি নির্মান শুরু করেছিল তুরস্ক৷ তবে এটার ছবি প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০১৮ সালের জুন মাসে৷ সাথে সাথেই এর সাইজ নিয়ে মিডিয়ায় হইচই পরে যায়৷ তখন ধারনা করা হচ্ছিল এট ৪.৫ টন ওজনের ড্রোন হবে৷ ড্রোনটির ডিজাইন পুরোপুরি কম্প্লিট হয় ২০১৯ সালের জুন মাসে৷ এর একমাস পর ইঞ্জিনসহ ড্রোনটি রানওয়েতে নামে৷ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এটি আকাশে উড়াল দেয়৷ ১৬ মিনিট আকাশে উড়ার পর আবার রানওয়েতে ফেরত আসে৷ বর্তমানে ড্রোনটি ডেভেলপমেন্টের পর্যায়ে আছে৷ তুরস্কের আশা ২০২১ সালের শুরুতেই এটা সার্ভিসে আসবে৷

প্রিয় দর্শক, বিপুল ক্ষমতাসম্পন্ন দানবীয় এই ড্রোনটি সার্ভিসে আসার পর তুরস্কের বিমান বাহিনীকে কতটা শক্তিশালী করবে বলে আপনি মনে করেন? আপানার মতামত কমেন্টে জানান৷

এই ড্রোনটি ছাড়াও টার্কিশ এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ TAI Aksungur ড্রোন নির্মান করছে৷ আকৃতিতে এটাও বায়রাক্তার আকিনসির সমান৷ আমাদের পরবর্তি

Tags
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close