তুরস্কের ড্রোন প্রযুক্তির সাফল্য নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই৷ বায়ারাক্তাক TB2 এবং TAI Anka ড্রোনে বেশ সাফল্যের পর তুরস্ক আরও শক্তিশালী ড্রোন নির্মানে হাত দেয়৷ তুরস্কের নতুন দুটি বিশালাকৃতির ড্রোন হচ্ছে বায়ারাক্তারের নির্মিত আকিনচি এবং টার্কিশ এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের তৈরী আকসুঙ্গার৷ আমাদের পূর্বের ভিডিওতে ক্রুইজ মিসাইল বহনে সক্ষম একমাত্র ড্রোন বায়রাক্তার আকিনচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি৷ আজকে জানাব তুরস্কের আরেকটি আপকামিং বিশালাকৃতির ড্রোন এই আকসুঙ্গার সম্পর্কের৷
তুরস্কের ড্রোন নির্মান করে দুটি প্রতিষ্টান৷ এগুলো হলো বায়ারাক্তার এবং টার্কিশ এ্যারোস্পেস ইন্ডাজট্রিজ৷ বায়ারাক্তার এর আগে TB2 ড্রোনের সাফল্যের পর বর্তমানে দানবীর আকৃতির আকিনচি ড্রোন তৈরী করছে৷ এদিকে টার্কিশ এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজও অতীতে TAI Anka ড্রোনের সাফল্যের পর বিশালাকৃতির আকসুঙ্গার ড্রোনটি নির্মান করেছে৷ এখানে বলে রাখি, টার্কিশ এ্যারোস্পেস ইন্ডাজট্রিজ হচ্ছে তুরস্কের সবথেকে বড় অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্টান৷ এটি তুরস্কের সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান৷ তুরস্কের বিমান বাহিনীর প্রধান ফাইটার F 16 বিমানকে নির্মান করে এই প্রতিষ্ঠান৷ F 16 ছাড়াও টাই হুরকুস বিমান নির্মান করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷
এমনকি তুরস্কের পঞ্চমপ্রজন্মের স্টিল্থ ফাইটার TFX নির্মানেরও প্রজেক্ট এই প্রতিষ্ঠানের হাতেই৷ এছাড়াও এখানে তুরস্ক এবং পাকিস্তানের এ্যাটার হেলিকপ্টার TAI T 129 নির্মান করা হয়৷ বিমান এবং হেলিকপ্টার ছাড়াও প্রায় জনখানেক মডেলের ড্রোন নির্মান করে প্রতিষ্ঠানটি৷ যার একটি হচ্ছে এই TAI Aksunger. তুর্কি ভাষায় আকসুঙ্গার বলতে এক ধরনের শিকারি বাজ পাখিকে বুঝায়৷ তুরস্কের নতুন এই ড্রোনটি বাজ পাখির মতোই ক্ষিপ্র এবং আক্রমণাত্মক হবে এমনটা বুঝাতেই এই নাম দেওয়া হয়েছে৷ দের বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ২০১৯ সালের মার্চ মাসে এটা আকাশে উড়ে৷ এরপর এক বছরে ৬০ থেকে ৭০ বার টেস্ট ফ্লাইট সম্পন্ন করে৷ বর্তমানে এটা আন্ডার ডেভেলপমেন্ট বা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর্যায়ে আছে৷
বিশালাকৃতির ড্রোনটি লম্বায় প্রায় ৪০ ফিট৷ আর খালি অবস্থায় ওজন ১৮০০ কেজি৷ তবে এটা সর্বচ্চ ৩৩০০ কেজি ওজন নিয়ে টেকঅফ করতে সক্ষম৷ এটা একটা টুইনবুম এয়ারক্রাফট৷ টুইনবুম বলতে সেসব আকাশযানকে বুঝান হয় যেগুলো এরকম ডানার সাথে লেজ যুক্ত থাকে৷ এই এই বুম দুটিতে দুটো টার্বোচার্জড ইঞ্জিন বসানো হয়েছে৷ প্রতিটা ইঞ্জিনে তিনটি করে ব্লেড রয়েছে৷ চার সিলিন্ডারের ইঞ্জিনগুলোর ক্ষমতা ১৮ থেকে ২২০ হর্সপাওয়ার৷ এই ইঞ্জিনগুলোর সাহায্যে ঘন্টায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলে ড্রোনটি৷
আর মাটি থেকে ৪০ হাজার ফিট উচু দিয়ে উড়তে পারে৷ এটার এন্ডিউরেন্স ৪০ ঘন্টা৷ অর্থাৎ একটানা ৪০ ঘন্টা আকাশে উড়তে পারে৷ টার্কিশ এ্যারোস্পেস ইন্ডাসট্রিজের তথ্যমতে ড্রোনটির রেঞ্জ সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটার! অর্থাৎ তুরস্ক থেকে উড়াল দিয়ে গ্রিস, লিবিয়া, মিশর, সিরিয়া, ইসরায়েল কিংবা আর্মেনিয়া এসব দেশে হামলা করতে সক্ষম হবে ড্রোনটি! যা নিশ্চিতভাবেই তুরস্কের জন্য বড় রকমের সুবিধা হয়ে দাড়াবে৷
এবারে আসি কি অস্ত্র থাকছে ড্রোনটিতে সেই ব্যাখায়৷ ড্রোনটি সর্বচ্চ ৭৫০ কেজি পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারে৷ এর আগের ড্রোনগুলো সাড়ে ৫শ কেজি পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারতো৷ অর্থাৎ আগের ড্রোনগুলোর থেকে প্রায় দেড়গুণ বেশি অস্ত্র লোড করা যাবে এটায়৷
ড্রোনটি এখান আন্ডার ডেভেলপমেন্টের পর্যায়ে থাকায় কি অস্ত্র এটায় ব্যবহার করা যাবে তা নিয়ে গবেষণা চলছে৷ ড্রোনটিতে ৬টি হার্ডপয়েন্ট রয়েছে৷ অর্থাৎ ৬ জায়গায় অস্ত্র নিতে পারে এটা৷ আপাতত রকেটসানের তৈরী CIRIT মিসাইল নিতে পেরেছে ড্রোনটি৷ এটা গাইডেড মিসাইল৷ এছাড়াও সাবমেরিন ধ্বংসের জন্য রকেটসানের DSH রকেট নিতে পারবে ড্রোনটি
মিসাইল এবং রকেট ছাড়াও ড্রোনটি পাঁচ ধরনের বোমা বহন করতে পারবে৷ এর মধ্যে তিন ধরনের বোমা তুরস্কেই তৈরী৷ এগুলো হচ্ছে MAM-L, MAM-C এবং LUMTAS. বাকি দুই ধরনের বোমা আমেরিকার তৈরী৷ এগুলো হচ্ছে লেজার গাইডেড বোমা MK 81 এবং MK 82. এগুলোর পাশাপাশি ড্রোনটিতে HGK 3 প্রেসিশন গাইডেন্স কিট এবং KGK উইং গাইডেন্স কিট ইন্সটল করা সম্ভব৷ যেগুলো এর অস্ত্রের মজুদ আরও বাড়াবে৷ টার্কিশ এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, তারা F 4 Phantom এবং F 16 Fighting Falcon বিমানের অস্ত্রগুলো এটায় যুক্ত করবে
এবারে আসি ড্রোনটি এভিয়নিক্স এবং কমিউনিকেশন সিস্টেমের বর্ণনায়৷ টার্কিস এ্যারোস্পেস ইন্ডাসট্রিজের মতে এটা অনেক শক্তিশালী রাডার এবং ক্যামেরা ইন্সটল করা হয়েছে৷ ড্রোনটিতে ৩ ধরনের এভিয়োনিক্স যুক্ত করা আছে৷ এর প্রধান রাডারটি খুবই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন৷ পাশাপাশি এ্যাপার্চার টার্গেটিং সিস্টেম যুক্ত করা আছে ড্রোনটিতে৷ যেটা কোন চলন্ত বস্তুকে হামলার জন্য লক করতে পারে৷ এছাড়াও একটি ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার পড যুক্ত করা আছে৷ এভিয়োনিক্সের দিক থেকে এটা একটি ফাইটার বিমানের চেয়ে কম নয়৷
এবারে চলুন ড্রোননটিকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেই বর্ণনায় যাওয়া যাক৷ এটা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি তুরস্কের অন্যসব ড্রোনের মতোই৷ এটায় অটোনোমাস সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে৷ যার ফলে ড্রোনটি নিজেই নিজের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে৷ অর্থাৎ ড্রোনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেকঅফ এবং ল্যান্ড করে৷ এর জন্য রানওয়ে নির্দিষ্ট করা থাকে৷ আর এই রানওয়েটির ভৌগলিক অবস্থান ড্রোনটির প্রোগ্রামে দেওয়া থাকে৷ যদি কখনও কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে ড্রোনটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, তখন জিপিএস ব্যবহার করে ড্রোনটি নিজে নিজেই রানওয়েতে ফিরে আসতে পারে৷
সবশেষে আসি দামের ব্যপারে৷ ড্রোনটির দাম নিয়ে টার্কিশ এ্যারোস্পেস ইন্ডাসট্রিস এখনও বিস্তারিত জানায়নি৷ তবে তুরস্ক অন্য দেশগুলো, বিশেষ করে পশ্চিমাদের তুলনায় অনেক কম খরচে এসব তৈরী করে থাকে৷ এই ড্রোনটিও তার ব্যতিক্রম হবে না৷
এখন পর্যন্ত দুটি প্রটোটাইপ তৈরী করা হয়েছে৷ টার্কিশ এ্যারোস্পেস ইন্ডাসট্রিজ এ বছরেই ড্রোনগুলো সার্ভিসে আনতে চেয়েছিল৷ তবে করোনা সংকোট সেটা পিছিয়ে দিয়েছে৷ প্রথমদিকে এটাকে তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা ব্যবহার করবে৷ পরবর্তিতে অস্ত্র যুক্ত করে তুরস্কের বিমান বাহিনীও ব্যবহার করবে৷
এই ড্রোনটির পর টার্কিশ এ্যারোস্পেস ইন্ডাসট্রিজ এটার সুপারসনিক ভার্সন গোকসুঙ্গার তৈরীতে হাত দিবে৷
প্রিয় দর্শক, বিপুল ক্ষমতাসম্পন্ন দানবীয় এই ড্রোনগুলো সার্ভিসে আসার পর তুরস্ক আরও কতটা শক্তিশালী করবে বলে আপনি মনে করেন?