বিশ্বের সবথেকে ভয়ংকর ১০ টি ব্যালেষ্টিক মিসাইল।টেক দুনিয়া

আমেরিকা রাশিয়া কিংবা চীন, পরাশক্তি দেশগুলো সর্বচ্চ চেষ্ট চালায় যত বেশি সম্ভব দুরপাল্লার ব্যলস্টিক মিসাইল তৈরীর প্রতিযোগীতায় নেমেছে৷ এমনকি ফ্রান্স ভারত কিংবা ইসরায়েলও নিজেদের শক্তিকে পাকাপোক্ত করতে এসব ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যস্টিক মিসাইল তৈরী করছে৷ যদিও এই দেশগুলোর হাতে শক্তিশালী যুদ্ধ জাহাজ কিংবা যুদ্ধ বিমান কোন কিছুরই কমতি নেই, তারপরও তারা এসব মিসাইল তৈরী করছে৷ কেননা এগুলো খুব অল্প সময়েই পারমানবিক বোমা নিয়ে শত্রু মাটিতে আঘাত করে বিশাল এলাকাকে কয়লা বানিয়ে ফেলতে পারে৷ এমনকি কিছু মিসাইল এতোই বেশি বিস্ফোরক ব্যবহার করে যে, একটা দেশকে পর্যন্ত পুড়িয়ে ছাই করতে সক্ষম!
তালিকার ১০ নাম্বারে আছে ইউরোপের পরাশক্তি ফ্রান্সের M51 ব্যালস্টিক মিসাইল৷ এটা মুলত SLBM. অর্থাৎ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপ করা হয়৷ ফ্রান্সের Triomphant ক্লাস সাবমেরিন থেকেই এগুলো নিক্ষেপ করা হয়৷ মিসাইলটিকে নির্মান করেছে ফ্রান্সের আরিয়ান গ্রুপ৷ বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা রকেট বা স্পেস লঞ্চ ভেহিকল Ariane V এই প্রতিষ্ঠানের তৈরী৷
ফ্রান্সের M51 মিসাইলটির রেঞ্জ ১০ হাজার কিলোমিটার৷ অর্থাৎ ফ্রান্স থেকে নিক্ষেপ করলে রাশিয়া, আমেরিকা, চীন সবখানেই আঘাত করতে পারবে৷ আর গতি এর Mach 25 বা ঘন্টায় ৩০ হাজার কিলোমিটার৷ মিসাইলটি ১১০ কিলোটনের ওয়ারহেড বহন করে৷ যেখানে হিরোশিমায় ফেলা বোমার ক্ষমতা ছিল মাত্র ১৫ কিলোটন৷
তালিকার ৯ নাম্বারে আছে আমেরিকার একমাত্র ভুমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালস্টিক মিসাইল LGM 30 Minuteman. কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ুযুদ্ধের সময় আমেরিকা বেশ কয়েক ধরনের ব্যালস্টিক মিসাইল তৈরী করলেও সোভিয়েত ইউনিয়ন পতন্র পর প্রায় সবগুলোকেই অবসরে পাঠায়৷ কেবলমাত্র এই মিনিটম্যান মিসাইলটিকেই সার্ভিসে রাখে৷ তিন স্তরের রকেটের সাহায্যে মিসাইলটি ১১ হাজার কিলোমিটার দুরের টার্গেটে আগাত করতে পারবে৷ অর্থাৎ আমেরিকা এই মিসাইলটি দিয়ে রাশিয়া, চীন, উত্তরকোরিয়া কিংবা ইউরোপে হামলা করতে পারবে৷ ফাইলান স্টেজে মিসাইলটির গতি দাড়ায় ঘন্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার৷ মিসাইলটিতে W87 ওয়ারহেড বসানো থাকে৷ যেটার বিস্ফোরন ক্ষমতা ৩০০ থেকে ৪৭৫ কিলোটন৷ মিসাইলটি নির্মান করেছে বিখ্যাত বোয়িং কোম্পানি৷ প্রতিটি মিসাইল তৈরীতে খরচ হয়েছে ৭ মিলিয়ন ডলার বা ৫৯ কোটি বাংলাদেশি টাকা৷
তালিকার ৮ নাম্বারে আছে ইসরায়েলের গোপন জেরিকো 3 মিসাইল৷ এটা অত্যান্ত গোপন এবং ইসরায়ে এর অস্তিত্ব অস্বীকার করায় এটা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি৷ তবে এভিয়েশন উইকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী এটার রেঞ্জ ৫ থেকে সাড়ে ১১ হাজার কিলোমিটার৷ ধারনা করা হয় মিসাইলটি ভুমধ্যসাগরের নিচে কোথাও মজুদ করা আছে৷ মিসাইলিতে ১৫০ থেকে ৪০০ কিলোটনের পারমানবিক বিস্ফোরক ভরানো থাকতে পারে৷ উল্লেখ্য ইসরায়েল তাদের হাতে পারমানবিক অস্ত্র থাকারও কথা স্বীকার করেনি৷
পুরো ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
তালিকার ৭ম স্থানে আছে SLBM R 29 মিসাইল. রাশিয়ার নৌবাহিনীর ব্যবহৃত মিসাইলগুলোর রেঞ্জ ১২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে৷ মিসাইলটির গতি নিয়ে তেমন কোন বিস্তারিত জানা যায়নি৷ তবে এটায় ৪টা MIRV ওয়ারহেড থাকে৷ প্রতিটার ক্ষমতা ৫০০ কিলোটন! অর্থাৎ একটি মিসাইল হিরোশিমার থেকে ১৩৩ গুন বেশি ধ্বংসাত্মক! রাশিয়া প্রত্যেকটা ডেল্টা VI ক্লাস সাবমেরিনে এরকম ১৬টি মিসাইল রয়েছে৷ যেহেতু রাশিয়ার সাবমেরিনগুলো এই মিসাইলগুলো নিয়ে গোটা পৃথিবী জুড়ে গোপনেই ঘোরাফেরা করে, তাই এগুলোকেই বর্তমান বিশ্বের সবথেকে ভয়ংকর অস্ত্র বলা যায়৷
তালিকার ৬ষ্ট স্থানে আছে আমাদের পার্শবর্তিদেশ ভারতের নির্মানধীন ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যলস্টিক মিসাইল অগ্নি – ৬ ৷ মিসাইলটির রেঞ্জ ১২ হাজার কিলোমিটার হবে বলে ভারত জানিয়েছে৷ আর এটায় বিস্ফোরক হিসেবে ১০টি MIRV ওয়ারহেড থাকবে৷ ভারতের The Pioneer পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী মিসাইলটি তৈরীতে রাশিয়া সাহায্য করছে৷ যেটা আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন৷
তালিকার ৫ম স্থানে আছে রাশিয়ার ২য় সর্বচ্চ শক্তিশালী ইন্টার ইক্টনেন্টাল ব্যলস্টিক মিসাইল RS 24 Yars. মিসাইলটির রেঞ্জ ১২ হাজার কিলোমিটার বা তার চেয়েএ বেশি৷ তবে এর গতি অনেক কম৷ ঘন্টায় এটা ২৪ হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে৷ গতি কম হলেও মিসাইলটির বিস্ফোরন ক্ষমতা হিরোশিমার থেকে ১৩৩ গুণ বেশি৷ এই মিসাইলটি ট্রাকে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করা যায়৷
তালিকার ৪র্থ স্থানে আছে আমেরিকার একমাত্র সাবমেরিন লঞ্চড ব্যালস্টিক মিসাইল UGM-133 Trident II. এটা আমেরিকার সবথেকে শক্তিশালী মিসাইল বা যুদ্ধাস্ত্র৷ মিসাইলটির রেঞ্জ ১২ হাজার কিলোমিটার৷ আর সর্বচ্চ গতি ঘন্টায় ২৯ হাজার কিলোমিটার! এটা সাড়ে ৩ হাজার কিলোটন পর্যন্ত বিস্ফোরক বহন করতে পারে৷ যা হিরোশিমায় ফেলা বোমার চেয়ে আড়াইশোগুণ বেশি শক্তিশালী! মিসাইলটিকে তৈরী করেছে লকহিড মার্টিন৷ প্রতিটি তৈরীতে খরচ হয় ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার! আমেরিকা ছাড়াও ব্রিটেন মিসাইলটি ব্যবহার করে৷
আপনাদেরকে অবাক করে দিয়ে তালিকার ৩য় স্থানে অবস্থান করছে উত্তর কোরিয়ার হসং 15 ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালস্টিক মিসাইল৷ আমেরিকার তথ্য মতে মিসাইলটির রেঞ্জ ১৩ হাজার কিলোমিটার! অর্থাৎ এটা সহজেই আমেরিকা এবং ইউরোপের যেকোন স্থানে পারমানবিক হামলা করতে পারবে! ২০১৭ টেস্ট করা মিসাইলটিকে কিম জং উনের সবথেকে বড় চমক বলা হয়৷
তালিকার ২য় স্থানে আছে চীনের সারপ্রাইজ ডংফেং 41 ব্যালস্টিক মিসাইল৷ মিসাইলটির রেঞ্জ ১৫ হাজার কিলোমিটার! ওয়েস্ট ইন্ডাজ বাদে পৃথিবীর যেকোন স্থানে হামলা করতে পারবে এটি৷ এটার গতি ঘন্টায় ৩০৬২৬ কিলোমিটার! বর্তমানে সার্ভিসে থাকা এটাই বিশ্বের সবথেকে দ্রুতগামী মিসাইল৷ মিসাইলটি ১ মেগাটন ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক বহন করতে পারে৷আমেরিকার জন্য এখন পর্যন্ত এটাকে সবথেকে বড় হুমকি বিবেচনা করা হয়৷
বর্তমান বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী মিসাইলটি হচ্ছে রাশিয়ার RS 28 Sramat. এটা এখনও অপারেশনে আসেনি৷ ভ্রাদিমির পুতিনের ছয়টি স্ট্রাটেজিক ওয়েপনের এটা একটি৷ মিসাইলটির রেঞ্জ ১৮ হাজার কিলেমিটার, যা বিশ্বে সর্বচ্চ৷ মিসাইলটি গতি ঘন্টায় সাড়ে ২৫ হাজার কিলোমিটার৷ তবে এর মাথায় থাকা এ্যাভানগার্ড হাইপারসনিক ভেহিকলটির গতি ঘন্টায় ৩৩৩৩৯ কিলোমিটার! মিসাইলটিকে তৈরী করা হয়েছে এই এ্যাভানগার্ডকে বহন করার জন্য৷ তবে এ্যাভানগার্ডের পরিবর্তে ১০টি MIRV নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডও বহন করতে পারে৷ রাশিয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে সামনের বছরের শুরুতেই এটা সার্ভিসে আনতে৷
প্রিয় দর্শক, এই দশটি মিসাইল ছাড়াও আর কয়েকটি ভয়ংকর মিসাইল আছে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর হাতে৷ এছাড়া এগুলোর থেকে শক্তিশালী মিসাইল তৈরীতেও তারা মনযোগী৷ যদি কখনও পরাশক্তি দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ লা আর এই মিসাইলগুলো ব্যবহার করা হয়, তাহলে কি ঘটবে বলে আপনি মনে করেন
টেক দুনিয়ায় প্রকাশিত লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।