সৌদি আরব সামরিকশক্তি| সৌদি আরব ইরান কার শক্তি কেমন?
পৃথিবীর সবথেকে ধনী সামরিকবাহিনীর মধ্যে সৌদিআরব অন্যতম! বর্তমানে অস্ত্র কেনার দিক থেকে গোটা পৃথিবীতেই সৌদি আরব প্রথম অবস্থানে আছে৷ আর আমেরিকা এবং চীনের পরপরই সৌদি আরবের সামরিক বাজেট সর্বচ্চ৷ অর্থাৎ রাশিয়ার থেকেও সৌদিআরব বেশি টাকা ব্যয় করে সেনাবাহিনীর পিছনে৷ যার ফলে দেশটির হাতে আছে বিপুল সংখ্যক ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমান, এ্যাপাচি হেলিকপ্টার এবং প্যাট্রিয়ট মিসাইলের মতো অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম! মুলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদিআরবের হাতেই সবথেকে আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম আছে৷ আমাদের আজকের ভিডিওটিতে জানাব এতো বিপুর পরিমান টাকাপয়সা ব্যয় করে এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে কতট শক্তিশালী সৌদিআরবের সামরিক বাহিনী৷
প্রায় পৌনে তিনশো বছর আগে 1745 সালে সৌদি সামরিক বাহিনীর প্রতিষ্ঠা হয়৷ মোটমাট চার লাখ আশি হাজার সৈনিক আছে সৌদি আরবের হাতে৷ আরও প্রায় সোয়া তিন লাখ সৈন্য রিজার্ভে আছে৷ গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের র্যাংকিং অনুযায়ী সৌদি আরবের অবস্থান ১৭ তে৷ অর্থাৎ ইসলায়েলের থেকে এগিয়ে আছে সৌদি আরব৷ সৌদি আরবের বাৎসরিক সামরিক বাজেট ৬৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ আমেরিকা আর চীন ছাড়া এতো বিশাল বাজেট আর কোন দেশের নেই৷ সৌদি সামরিক বাহিনীর প্রধান হচ্ছে বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমান৷ সেনাবাহিনী বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীর পাশাপাশি এয়ার ডিফেন্স এবং মিসাইলফোর্স নামে আরও দুটি শাখা আছে সৌদি সামরিক বাহিনীর৷ চলুন তাহলে এসব বাহিনীর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক৷
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
প্রথমেই সৌদি সেনাবাহিনী৷ সৌদি সেবাহিনীর সদস্য সংখ্যা আড়াই লাখেরও বেশি৷ সৌদি সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো অামেরিকা ব্রিটেন এবং জার্মানির তৈরী৷ এছাড়া চীন রাশিয়া সুইডেনসহ আরও হাফ ডজন দেশের কাছে অস্ত্র কিনে সৌদি সেনাবাহিনী৷ সৌদি সেনাবাহিনীর মেরুদন্ড হচ্ছে প্রায় হাজারখানেক ট্যাংক৷ এদের মধ্যে সবথেকে উন্নত হচ্ছে M1 আব্রামস ট্যাংক৷ আব্রামস ট্যাংককে বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী ট্যাংক ধরা হয়৷ মোটমাট চারশো বিশটি আব্রাংস ট্যাংক আছে সৌদিআরবের কাছে৷ আব্রামস ট্যাংক ছাড়াও তিনশো নব্বইটি প্যাটন ট্যাংক এবং আরও আড়াইশোটি AMX 30 ট্যাংক আছে সৌদি আরবের কাছে৷ তবে কয়েক বছর আগেও সৌদি আরবের হাতে আরও বিপুল পরিমান ট্যাংক ছিল৷ কিন্তু ইয়েমেনে যুদ্ধ করতে গিয়ে ২০টি আব্রামস, ৩৭টি প্যাটনসহ প্রায় ষাটটি সৌদি ট্যাংক ধ্বংস করেছে হুথি যোদ্ধারা৷ ট্যাংক ছাড়াও আরও প্রায় পনের হাজার আর্মড ফেহিকল আছে সৌদি সেনাবাহিনীতে৷
তবে সৌদি সেনাবাহিনীর অন্যতম শক্তির জায়গা হচ্ছে আমেরিকার তৈরী এ্যাপাচি হেলিকপ্টার৷ প্রায় একশোটি এ্যাপাচি হেলিকপ্টার আছে সৌদি সেবাহিনীতে৷ এছাড়াও বেল এবং শিকরোস্কাইয়ের তৈরী আরও প্রায় একশোটি হেলিকপ্টার আছে সৌদি আরবের হাতে৷ হেলিকপ্টারের পাশাপাশি তিনশোর উপরে ড্রোন আছে সৌদি আরবের কাছে৷ অধিকাংশ ড্রোন চীনের তৈরী৷
এবারে আসি সৌদি বিমান বাহিনীর বর্ননায়৷ মধ্যপ্রচ্যের মধ্যে সৌদি বিমান বাহিনীই সব থেকে উন্নত বিমান অপারেট করে৷ এর মধ্যে টর্নেডো টাইফুন এবং F 15 ইগল প্রধান৷ বর্তমান বিশ্বের ইউরোফাইটার টাইফুন সব থেকে সেরা যুদ্ধ বিমানগুলোর একটি৷ ইউরোপের বাইরে একমাত্র সৌদি আরবই এই বিমান কিনতে পেরেছে৷ মোটমাট সত্তুরটি ইউরোফাইটার টাইফুন আছে সৌদি বিমান বাহিনীতে৷ তবে সৌদি আরবের কাছে সব থেকে বেশি বিমান আছে আমেরিকৈর তৈরী F 15 ইগল৷ প্রায় দুইশোটি F 15 ইগল বিমান আছে সৌদি আরবের হাতে৷ উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় এই বিমান গুলোই সৌদি আরবকে ইরাকের আক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে ছিল।
এর পাশাপাশি সৌদি বিমান বহরে আছে বৃটেনের তৈরি টর্নেডো বিমান। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার বিমান আছে সৌদি বিমান বাহিনীতে।
এবার আসি সৌদি নৌবাহিনী শক্তির বর্ণনা। সৌদি আরবের তিন দিকে আছে সব থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক জলপথ। এগুলো হচ্ছে ভূমধ্যসাগর আরব সাগর এবং লোহিত সাগর। বিশেষ করে লোহিত সাগর সৌদি আরবের দখলে। আর ভূমধ্যসাগর থেকে আরব সাগরের যাতায়াতের একমাত্র পথ হচ্ছে এই লোহিত সাগর। পৃথিবীর মোট বাণিজ্যের অর্ধেকেরও বেশি হয়ে থাকে এই লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে। তবে সৌদি আরবের দখলে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক এলাকা থাকলেও তেমন কোনো যুদ্ধজাহাজ নেই। উল্লেখযোগ্য যুদ্ধজাহাজগুলো মধ্যে চারটি ফ্রিগেট এবং চারটি করভেট আছে।
সৌদি আরবের কাছে কোন সাবমেরিন নেই। যার কারণে নৌ শক্তিতে সৌদি আরব এই অঞ্চলে ইসরাইল ইরান এবং তুরস্কের চেয়ে অনেক বেশি পিছিয়ে আছে। তবে সৌদি নৌবাহিনীতে খুব বেশি জাহাজ না থাকলেও অনেকগুলো হেলিকপ্টার আছে।
সবশেষে সৌদি আরবের মিছাইলের বর্ণনা। সৌদি আরবের হাতে প্যাট্রিয়ট এবং থাডের মতো অত্যন্ত শক্তিশালী কিছু মিসাইল আছে। এই মিসাইলগুলোর কারণে পার্শ্ববর্তী কোন দেশ সৌদি আরবে হামলা করতে পারে না। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় সাদ্দাম হোসেন কয়েকশো মিসাইল সৌদি আরবের দিকে নিক্ষেপ করলেও সৌদি আরবে মিসাইলগুলো সেগুলো কে ধ্বংস করে দেয়।
সার্বিক দিক বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্রের দিক থেকে সৌদি আরবের ধারের কাছেও মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ নেই৷ তবে সৌদি আরবের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকলেও সেগুলো ব্যবহারের সৌদিরা তেমন দক্ষ নয়৷ এজন্য সৌদি সামরিক বাহিনী প্রচুর সৈন্য ব্রিটেন এবং ফ্রান্স থেকে ভারা করে৷ যার কারনে ইরানসহ পার্শবর্তি দেশগুলো সৌদিআরবকে তেমন একটা তোয়াক্কা করে না৷ স্বাভাবিকভাবেই সৌদি সরকার নিরাপত্তার জন্য নিজেদের সামরিক বাহিনীর চেয়ে আমেরিকা এবং ন্যাটোর প্রতিই বেশি নির্ভরশীল৷