রাশিয়ার তৈরী S 300 এবং S 400 মিসাইলের চাহিদা গোটা পৃথিবীব্যাপি৷ এমনকি তুরস্ক এবং ভারতের মতো দেশও রাশিয়ার কাছে এই মিসাইলগুলো পাওয়ার আশায় হাত পেতে বসে আছে৷ কিন্তু ইরান রাশিয়ার একদম ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়া সত্তেও কেন কখনও এইসব মিসাইল কিনে না?
এর কারন হচ্ছে, ইরানের হাতে আছে অত্যাধুনিক বাভার 373 মিসাইল সিস্টেম৷ একবারেই নতুন এই মিসাইলগুলো 2019 সালে ইরানের সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হয়৷ ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরী মিসাইলগুলো একসাথে পঞ্চাশটিরও বেশি আমেরিকান বিমানকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে৷ মজার ব্যপার হচ্ছে, ইরানের সবথেকে আধুনিক এই অস্ত্রগুলো তৈরী করেছে ইরানের কয়েকটি প্রকৌশলি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্ররা মিলে৷ আমাদের আজকের ভিডিওটিতে জানাব রাশিয়ার S 400 মিসাইলের সমকক্ষ এই বাভার 373 মিসাইলের অবিশ্বাস্য ক্ষমতার বর্ণনা৷ আর আমেরিকা কেন এই মিসাইলের ভয়ে ইরানের সাথে যুদ্ধে জড়াচ্ছে না তা জানতে পুরো ভিডিওটি দেখতে থাকুন৷
ইরানের বিমানবাহিনী শক্তিশালী হলেও আমেরিকার কাছাকাছি নয়৷ কেননা ইরানের হাতে দামী বিমান নেই৷ আর এ কারনেই আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য ইরান ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে৷ ইরানের সামরিক বাহিনীর সবথেকে বড় শক্তিই হচ্ছে ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরী মিসাইল৷ এরই অংশ হিসেবে 2010 সালে রাশিয়ার S 300 মিসাইলগুলোর থেকে উন্নত মিসাইল তৈরীর পদক্ষেপ হাতে নেয় ইরান৷ তবে ইরানকে এই মিসাইল তৈরীতে কারিগরি সাহায্য দেয় রাশিয়া৷ প্রায় ৯ বছর ধরে কাজ চালানোর পর ২০১৯ সালের ২২শে আগস্ট এই বাভার 373 মিসাইল সার্ভিসে আনার আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেন৷ বাভার শব্দের অর্থ বিশ্বাস আর 373 ইরানে মুসলিমদের নবীর নামের অক্ষর হিসেবে প্রচলিত৷
এই মিসাইল সিস্টেমগুলো সারফেইস টু এয়ার মিসাইল এবং এন্টি ব্যল্টিক মিসাইল হিসেবে কাজ করতে পারে৷ বাভার 373 মিসাইল সিস্টেমে মিসাইল হিসেবে আছে সায়াদ 4 মিসাইল৷
সায়াদ 4 মিসাইলের রেঞ্জ দুইশো কিলোমিটারের চেয়েও বেশি৷
জলজানা নামক দশ চাকার ট্রাকে চারটি করে সায়াদ 4 মিসাইল সাজিয়ে তৈরী করা হয়েছে এই বাভার মিসাইল সিস্টেম৷ মিসাইল সিস্টেমে যে রাডার ব্যবহীর করা হয়েছে তার রেঞ্জ চাড়ে চারশো কিলোমিটার৷ ফকর কমান্ডিং এন্ড স্মার্ট কন্ট্রোল সিস্টেম এই সব কিছুর সমন্বয় ঘটায়৷ আর দ্রুত যোগাযোগ এবং তথ্য আদান প্রদানের জন্য এতে আছে রসুল কমিউনিকেশন সিস্টেম৷
মিসাইল সিস্টেমটির রেঞ্জ সাড়ে চারশো কিলোমিটার৷ আর শত্রুপক্ষের বিমান বা অন্য কোন টার্গেটকে শণাক্ত করতে পারে তিনশো কিলোমিটার দূর থেকেই৷ সেই টার্গেটগুলো আড়াইশো কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসলেই সেটাকে আঘাত করার জন্য লক করতে সক্ষম এই মিসাইল সিস্টেম৷ একসাথে 200 টি টার্গেটকে ধাওয়া করতে পারে এই মিসাইল সিস্টেমের রাডারটি৷ 200 কিলোমিটারের মধ্যেই যেকোন টার্গেটকে ধ্বংস করতে সক্ষম এই মিসাইল সিস্টেম৷
মিসাইলগুলোর আরও একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা আছে৷ তা হলো ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়া বা শত্রপক্ষের বিমান দ্বারা এর সিস্টেম জ্যাম করা সম্ভব না৷ উল্লেখ্য ইসরায়েল প্রায়ই বড় রকমের বিমান হামলার সময় শত্রুপক্ষের রাডার এবং মিসাইল সিস্টেম জ্যাম করে বা অকেজো করে দেয়৷ বিশেষ করে অপারেশন ডেজার্ট ফক্সের অংশ হিসেবে ইজরায়েলি বিমান সাদ্দাম হোসাইনের বৈদ্যুতিক চৌম্বক তরঙ্গ দিয়ে মিসাইল সিস্টেম অকেজো করে ইরাকে পরমানু স্থাপনায় হামলা করেছিল৷
ইরানের এই মিসাইল সিস্টেমকে কখনোই সেভাবে অকেজো করতে পারবে না আমেরিকা বা ইজরায়েল৷
এই মিসাইলগুলো কোন কোম্পানি তৈরী করেছে তা গোপন রেখেছে ইরান সরকার৷ তবে ইরানের কয়েকটি প্রকৌশন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই মিসইল তৈরীতে অবদান রেখেছেন বলে ইরানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে৷
স্বাভাবিক ভাবেই এই মিসাইলগুলো আমেরিক এবং ইজরায়েলের মধ্যে আতংক তৈরী করেছে৷ যার ফলে তারা কোনভাবেই ইরানে বিমান হামলা করার সাহস পাচ্ছে না৷ এদিকে ইরানও এই মিসাইল তৈরীর মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা একদম পাকাপোক্ত করে ফেললো৷