অন্যান্য

পানামা খাল সৃষ্টির রহস্য। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল জলপথ

আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারদের সবথেকে বিস্মকর সৃষ্টি হচ্ছে এই পানামা খাল৷ বিশ্বের সবথেকে বড় দুই মহাসাগর আটলান্টিক মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্ত করেছে খালটি৷ সেই সাথে আলাদা করে দিয়েছে দুই মহাদেশকে৷ যাতায়াতের সময় কমিয়ে দিয়েছে ছয় মাস৷ কিন্তু খালটি তৈরীতে মিশে আছে হাজার হাজার শ্রমিকের লাশ৷ সুয়েজখাল তৈরীর মহানায়ক ইঞ্জিনিয়ার ফারদিনান্দ দি লেসেপ্স এখানে এসে হয়েছেন চূড়ান্ত ব্যার্থ! ফকির হয়ে গিয়েছিল ফরাসি সম্রাজ্য! ধ্বংস হয়েছে পাড়ার, জঙ্গল, শহর৷ জন্ম নিয়েছে নতুন দেশ এবং নতুন হ্রদ৷৷ শ্রম দিয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা, চীন এবং ভারতের শ্রমিকরা! অবশেষে দুই মহাসাগরের ৮ তলার সমান পানির ব্যবধানকে পরাজিত করে জন্ম দিয়েছে খালটি৷ tech duniya, tech duniya bangla পানামা খালের বিস্মকর সৃষ্টির রহস্য। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল জলপথ। পানামা খালের ইতিহাস। টেক দুনিয়া

পানামা খালের অবস্থান মধ্য আমেরিকার দেশ পানামাতে৷ এর পূর্বে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর৷ আর উত্তরে রয়েছে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ এবং দক্ষিনে দক্ষিণ আমেরিকা৷ দুই সাগর থেকে খালটি ৮০ ফিটেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত৷ ফলে পানির লক ব্যবহার করে এভাবেই জাহাজগুলোক উপরে উঠানো হয়৷ আবার ঠিক একইভাবে নিচে নামানো হয়৷ techduniyabd

খালটির মোট দৈর্ঘ মাত্র ৮২ কিলোমিটার৷ অথচ এই ৮২ কিলোমিটারের কারনে ৬৫০০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাওয়া থেকে রেহাই পেয়েছে পৃথিবীবাসী৷

১৬শ শতাব্দিতে খালটি তৈরীর চিন্তা প্রথম করে স্প্যানিশ ইঞ্জিনিয়াররা৷ তখন দুই মহাসাগরকে যুক্ত করার চিন্তাটা হাস্যকর ছিল৷

কিন্তু প্রশান্ত মহাসগর থেকে আটলান্টিকে যাতায়াত করতে ব্রাজিল আর্জেন্টিনাসহ গোটা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ ঘুরতে সময় লাগতো ছয় মাস৷

যার কারনে ১৮৮১ সালে ফ্রান্সের শাসকেরা সুয়েজ খাল তৈরীর ইঞ্জিনিয়ার ফার্দিনান্দ দি লেসেপ্সকে পানামা খাল তৈরীতে নিযুক্ত করেন৷ মরুভুমির মধ্যে দিয়ে সুয়েজ খাল তৈরী করা সহজ ছিল৷ কিন্তু পানাম খাল তৈরী করতে বড় বড় পাহাড় ও জঙ্গল কাটতে হতো৷ তাছাড়াও দুই সমুদ্র থেকে খালটি ৮৫ ফিট উচুতে অবস্থিত৷ সেই সাথে ইয়োলো ফিভার, সাপের কামড় এবং জাগুয়ারের আক্রমনে হাজার হাজার শ্রমিক মারা যায়৷ ফলে ব্যর্থ হয় ফ্রান্সের চেষ্টা৷ সেই সাথে বিশাল অর্থ হারিয়ে দেউলিয়া হয় তারা৷

এরপর ১৯০৩ সালে আমেরিকা খাল খননের উদ্যোগ নেয়৷ তখন পানামা কলম্বিয়ার অধীনে থাকায় আমেরিকা ষড়যন্ত্র করে পানামাকে কলম্বিয়া থেকে স্বাধীন করে দেয়৷ খাল খননের শুরুতেই ইঞ্জিনিয়াররা শার্গেজ নদীতে বাধ দেয়৷ যার ফলে নদীর পানি আটকে গিয়ে ১৬৪ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল গাটুন হ্রদের সৃষ্টি হয়৷ আর এই হ্রদে বন জঙ্গল সব পানি ডুবে যায় এবং খাল খননও সহজ হয়ে যায়৷ পরে ৩ কোটি টন ডিনামাইট ব্যবহার করে দক্ষিনের কুলেব্রা পাহাড় উড়িয়ে দেওয়া হয়৷ এভাবেই স্প্যানিসদের স্বপ্ন, ফরাসীদের সাহস, আমেরিকানদের ষড়যন্ত্র, চীনাদের রেললাইন, ভারতীয় শ্রমিকদের জঙ্গল কাটা আর ক্যারিবিয়ানদের পাহার কাটার সমন্বয়ে বাস্তবে রূপ নেয় পানামা খাল৷

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

খালটি তৈরীতে সময় লাগে ৩৩ বছর এবং মারা যায় ২৭ হাজারেরও বেশি শ্রমিক৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় ১৯১৪ সালে প্রথম খালটি দিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু করে৷

বর্তমানে খালটির মালিকানা পানামা সরকারের হাতে রয়েছে৷ প্রতি দিন ৩৫ থেকে ৪০টি করে বছরে ১৩ থেকে ১৪ হাজার জাহাজ চলাচল করে এই খালটি দিয়ে৷

তবে খালটির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ এখান দিয়ে ৩৬৬ মিটারের চেয়ে বড় জাহাজ চলাচল করতে পারে না৷

ফলে পানামার পার্শবর্তি দেশ নিকারাগুয়াতে নতুন একটি খাল খননের পরিকল্পনা করছে চীন৷ চীনের এই পরিকল্পনাকে অসম্ভব পাগলামী বলছে আমেরিকানরা৷ এর জবাবে অবশ্য চীন বলে, চীনের মহাপ্রাচীর তৈরী করা জাতি তারা৷ তাদের কাছে অসম্ভব কিছু নেই৷

প্রিয় দর্শক, আপনি কি মনে করেন চীন নতুন এই খালটি কাটতে সক্ষম হবে? নাকি ফ্রান্সের মতো তারাও বিশাল অর্থের অপচয় ঘটাবে মাত্র৷

Tags
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close