বিশ্বের সেরা ৫টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। রাশিয়া বনাম আমেরিকা
হুটহাট শত্রুর ঘাটিতে আক্রমণ চালানোর জন্য যুদ্ধ বিমান চমৎকার একটা অপশন৷ টেক দুনিয়া বিশেষ আরব ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের মিশরে এবং সিরিয়ায় বোমা হামলা চালিয়ে পুরো সমারিক শক্তিকে পঙ্গু করে দেওয়া কিংবা একই কায়দায় ইরাকের পারমানবিক স্থাপনা ধ্বংসের ঘটনা এর সেরা উদাহরণ৷ আবার হুটহাট মিসাইল নিক্ষেপ করে শত্রুর ক্ষতি করে ইরান, হিজবুল্লাহ কিংবা হামাসও এধরনের সারপ্রাইজ দিয়েছে৷
শত্রুর এরকম বিমান হামলা কিংবা মিসাইল হামলা ঠেকানোর জন্য ব্যবহার করা হয় আরেক ধরনের সারফেস টু এয়ার মিসাইল৷ আর এধরনের সিস্টেমকে আমরা বলে থাকি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম৷ বর্তমানে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম খুবই গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র৷ বিশেষ করে তুরস্ক অত্যাধুনিক F 35 বিমান কেনা বাদ দিয়ে রাশিয়ার কাছে S 400 মিসাইল সিস্টেম কিনে সেটা আরও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে৷ আমাদের আজকের ভিডিওটিতে থাকছে বর্তমান বিশ্বের সেরা ৫টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের বর্ণনা৷ তাহলে চলুন বিমান, ব্যালস্টিক মিসাইল কিংবা স্যাটেলাইটকে ধ্বংসে সবথেকে দক্ষ অস্ত্রগুলো সম্পর্কে জানতে পুরো ভিডিওটি দেখা যাক৷
তালিকার ৫ম স্থানে আছে চীনে এক্টিভ রাডার হোমিং সারফেস টু এয়ার মিসাইল HQ 9. অনেকেই এটাকে রাশিয়ার S 300 মিসাইল সিস্টেমের চাইনিজ কপি বলে৷ তবে চীন সেটা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে৷ ১৯৯৭ সালে প্রথম এটা সার্ভিসে আসে৷ মিসাইলটির রেঞ্জ ২০০ কিলোমিটার৷ তবে এর গতি অনেক কম৷ ঘন্টায় এটা সর্বচ্চ ৫ হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে৷ এটা এই তালিকার সবথেকে স্লো মিসাইল৷ সিস্টেমটির রাডার রেঞ্জ ৩০০ কিলোমিটার৷ এটাতে PESA রাডার ব্যবহার করা হয়েছে৷ মিসাইল সিস্টেমটি যুদ্ধ জাহাজেও ইন্সটল করা যায়৷ মিসাইল সিস্টেমটির পিছনে খরচ করতে হয় ১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা দেড় হাজার কোটি বাংলাদেশি টাকা৷ চীন ছাড়াও আলজেরিয়া, মরক্কো, তুর্কিমিস্তান এবং উজবেকিস্তান এগুলো ব্যবহার করে৷
তালিকার ৪ নাম্বারে আছে ইসরায়েলের তৈরী অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম David’s Sling. ২০১৭ সালে অপারেশনে নামা মিসাইল সিস্টেমটি বর্তমান বিশ্বের সর্বশেষ যুক্ত হওয়া মিসাইল সিস্টেম৷ ডেভিডস স্লিং অর্থ হচ্ছে ডেভিড বা দাউদ নবীর গুলতি৷ মিসাইলটিকে হিব্রু ভাষায় জাদুর ছরিও বলা হয়৷ ইসরায়েলের বিখ্যাত আয়রোন ডোমের কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি৷ হামাস এবং হিজবুল্লাহর প্রায় দুই হাজার রকেট এবং মিসাইলকে ধ্বংস করা হয়েছিল আয়রন ডোমের মাধ্যমে৷ কিন্তু সেই আয়রন ডোমকে অবসরে পাঠাতেই এই ডেভিডস স্লিং মিসাইল সিস্টেম তৈরী করেছে ইসরায়েল৷ আয়রোন ডোম ছাড়াও ইসরায়েলের এ্যারো এবং ভারতের সাথে যৌথভাবে নির্মিত বারাক ৮ সিস্টেমকেও অবসরে পাঠাবে এই নতুন মিসাইল সিস্টেমটি৷ এটাকে নির্মান করেছে ইসরায়েল রাফায়েল গ্রুপ এবং আমেরিকার রাইথিয়ন কর্পোরেশন৷ এটা শত্রুর যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার কিংবা ড্রোনের পাশাপাশি রকেট, ব্যালস্টিক মিসাইল এবং ক্রুইজ মিসাইলকেও ধ্বংস করতে পারে৷ সিস্টেমের মিসাইলের রেঞ্জ ১৬০ কিলোমিটার, মতান্তরে ৩০০ কিলোমিটার৷ মিসাইলটির সর্বচ্চ গতি ঘন্টায় ৯২৬১ কিলোমিটার৷ এটার গাইডেন্যান্স সিস্টেমে ৪৭০ কিলোমিটার রেঞ্জের AESA রাডারসহ মোট পাঁচ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে৷ যা এর টার্গেটকে কোনভাবেই বাঁচতে দিবে না৷ সিস্টেমটির পিছনে ব্যয় করতে হয় ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ১শ কোটি বাংলাদেশি টাকা৷
তালিকার ৩ নাম্বারে আছে বর্তমানে আমেরিকার প্রধান নির্ভরতা থাড ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবস্থা৷ THAAD এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Terminal High Altitude Area Defense. বিখ্যাত লকহিড মার্টিন কোম্পানির তৈরী মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমটি ২০০৮ সালে সার্ভিসে আসে৷ মিসাইল সিস্টেমটিকে লকহিড মার্টিন তৈরী করলেও বোয়িং, রাইথিয়ন, এ্যারোজেট, হানিওয়েল, বাইসিস্টেমসহ আরও দুটি হেভিওয়েট প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে৷ পৃথিবীর আর কোন অস্ত্র তৈরীতে এতোগুলো প্রতিষ্ঠান একসাথে কাজ করেনি৷ অন্যসব মিসাইল সিস্টেমের মতো এটায় ওয়ারহেড ভরানো থাকে না৷ তার বদলে এটা কিনেটিক এনার্জি অফ ইম্প্যাক্ট ব্যবহার করে৷ মিসাইলটির রেঞ্জ ২০০ কিলোমিটারের মধ্যেই৷ তবে এটা মাটি থেকে ১৫০ কিলোমিটার উচু দিয়ে উড়তে পারে৷ মিসাইলটির সর্বচ্চ গতি ঘন্টায় ১০১৭৪ কিলোমিটার৷ এটা হিট টু কিল এপ্রোচে আঘাত করে৷ যার কারনে এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া মুশকিল৷ মিসাইল সিস্টেমটির পিছনে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৬ হাজার ৮শ কোটি বাংলাদেশি টাকা ব্যয় করতে হয়৷
পুরো ভিডিওটি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন
তালিকার ২য় স্থানে আছে বর্তমানে সবথেকে বেশি হইচই ফেলে দেওয়া রাশিয়ার S 400 Triumf. রাশিয়ার দাবী অনুযায়ী এটা যেখান থাকবে সেখানো কোন বিমান বা ব্যালস্টিক মিসাইল দিয়ে হামলা করা সম্ভব না৷ মিসাইল সিস্টেমটির ক্ষমতা সম্পর্কে ভালো আচ পাওয়া যায় যখন এই মিসাইল কেনার কারনে তুরস্ককে F 35 স্টেল্থ বিমান দিতে বিরত থাকে আমেরিকা৷ খোদ আমেরিকাই বলেছে তাদের সবথেকে আধুনিক F 35 এর জন্য এই মিসাইল সিস্টেম হুমকিস্বরূপ৷ সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম পিস রিসার্সের মতে এটাই বিশ্বের সব থেকে সেরা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম৷ ২০০৭ সালে S 300 মিসাইল সিস্টেমকে আরও উন্নত করে এই মিসাইল সিস্টেমটি তৈরী করে রাশিয়া৷ মিসাইলগুলোর রেঞ্জ ৪০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার৷ একেকটি মিসাইল ঘন্টায় ১৭২৮৭ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে৷ কিন্তু তারপরও মিসাইল সিস্টেমটি তুলনামুলক সস্তা৷ ১২০টি মিসাইল, ৯টি লঞ্চার এবং কমান্ড এ্যান্ড সাপোর্ট ভেহিকল মিলে এক ফায়ার ইউনিটের দাম পরে মাত্র ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ৫শ কোটি বাংলাদেশি টাকা৷
রাশিয়ার বাইরে প্রথম কোন দেশ হিসেবো চীন এই মিসাইল সিস্টেমটি ক্রয় করে৷ এরপরই রাশিয়ার ঘনিষ্ট মিত্র বেলারুশ এবং আলজেরিয়া মিসাইল সিস্টেমটি ক্রয় করে৷ সর্বশেষ তুরস্ক মিসাইল সিস্টমেটি কেনার পর থেকেই আমেরিকা এবং ন্যাটোর বড় ধরনে রেষানলে পরে যায়৷ ন্যাটো এই মিসাইল সিস্টেমটিকে তাদের প্রতিপক্ষ ভাবে৷ তারপরও আমেরিকার অন্যসব মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, ইরাক এবং পাকিস্তানও মিসাইল সিস্টেমটি ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়েছে৷ সম্পূর্ণ পশ্চিমা অস্ত্রের প্রতি ঝুকে থাকা সৌদি আরব তাদের নিরাপত্তায় এই মিসাইল সিস্টেম কিনতে ৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে৷ এছাড়ও ভারত মিসাইল সিস্টেমটি কিনতে প্রায় সাড়ে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছে৷ বর্তমানে রাশিয়া S 400 কে আপগ্রেড করে আরও শক্তিশালী S 500 তৈরীর গবেষণা চালাচ্ছে৷
তালিকার সবার উপরে রয়েছে RIM 161 Standard Missile 3. মিসাইলটির অপারেশনাল রেঞ্জ ২৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে৷ যা সত্যিই সাংঘাতি বিষয়৷ তবে এই মিসাইলটির গতি রাশিয়ার S 400 এর থেকে কিছুটা কম৷ ঘন্টায় এটা ১৬৩০০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলে৷ রাইথিওনের তৈরী মিসাইলটি ২০১৪ সালে সার্ভিসে আসে৷ পরবর্তিতে জাপানের মিতসুবিসি মিসাইলটিকে আরও শক্তিশালী করে তুলে৷ এটাকে মুলত নির্মান করা হয়েছে রাশিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়ার ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালস্টিক মিসাইল হামলার হাত থেকে বাঁচতে৷ যার কারনে আমেরিকায় গবেষণায় পর্যায়ে থাকতেই জাপান এগুলোকে সার্ভিসে নামায়৷ এরপর দক্ষিণ কোরিয়াও তাতে সামিল হয়৷ বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার যেকোন ধরনের হামলা ঠেকাতে এগুলোই এখন দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের ভরসা৷ এছাড়াও আমেরিকার নৌবাহিতেও এগুলো এখন অপারেশনাল৷ ব্যালস্টিক মিসাইলের পাশাপাশি লো আর্থ অরবিটে থাকা স্যাটেলাইটকেও ধ্বংস করতে সক্ষম এই মিসাইলটি৷ প্রতিটি মিসাইল নিক্ষেপ করতে খরচ হয় ৯ থেকে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার! বেলজিয়াম তাদের নতুন ফ্রিগেইট এবং তুরস্ক তাদের প্রথম ডেস্ট্রয়ারে এই মিসাইলগুলো ইন্সটল করার পরিকল্পনা করছে৷
প্রিয় দর্শক, ডিফেন্স বা প্রতিরক্ষার নাম করে অস্ত্র উৎপাদন করা হলেও পৃথিবীর প্রায় সকল অস্ত্রই অন্যকে আক্রমণ এবং ধ্বংসের উদ্দশ্যেই তৈরী করা হয়েছে৷ কিন্তু এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলি কোন আক্রমণ নয় বরং সাধারন মানুষকে ভয়ংকর সব বিমান এবং ব্যলস্টিক মিলাইলের হাত থেকে বাঁচাতে নির্মান করা হয়েছে৷ কিন্তু এতো বেশি আক্রমণাত্বক অস্ত্রের বিরুদ্ধে এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলি কি পারবে পৃথিবাকে সব সময় রক্ষা করতে? আপনার মতামত কমেন্টে জানান৷