অন্যান্যদেশ পরিচিতিসব দেশ একসাথেসামরিকশক্তি

ভুমধ্যসাগরের শক্তিশালী ৫টি দেশ কার সামরিকশক্তি কতটা

ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়া তিন মহাদেশের মাঝখানে ভুমধ্যসাগর৷ এই সাগরের পার্শবর্তি দেশগুলো যেমন ধনী তেমনি রয়েছে বিশাল সামরিকশক্তি৷ যার কারনে সবসময়ই ভুমধ্যসাগরের পার্শবর্তি দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে৷ আমাদের আজকের ভিডিওটিতে এই ভুমধ্যসাগরের পার্শবর্তি দেশগুলোর মধ্য থেকে সবথেকে শক্তিশালী পাঁচ দেশের সামরিক্তশক্তি তুলে ধরবো৷

তালিকার ৫ নাম্বারে আছে ইহুদিবাদী ছোট্ট দেশ ইসরায়েল৷ ইসরায়েলের অবস্থান ভুমধ্যসাগরের পূর্ব দিকে এশিয়া মহাদেশের অংশে৷ আয়তনে খুব ছোট হলেও বুদ্ধিমত্তা জোরে এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে দেশটি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র৷ জন্মলঘ্ন থেকেই দেশটি পশ্চিমাদের বড় ধরনের সামরিক সমর্থন পেয়ে আসছে৷ এছাড়াও নিজেদের বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে বিশাল অস্ত্র শিল্পও তৈরী করেছে৷ সবসময়ই ইসরায়েলে জরুরী অবস্থা জারী করা থাকে৷ কেননা ইসরায়েল সর্বদাই পার্শবর্তি প্রতিবেশি আরব দেশগুলোর হামলার আশঙ্কায় থাকে৷ যার কারনে ইসরায়েলের প্রতিটা নাগরিকের বাধ্যতামূলক সামরিক ট্রেনিং নিতে হয়৷ এজন্যই ইসরায়েলে ‌১ লাখ ৭০ হাজার এক্টিভ সৈন্যের পাশাপাশি সাড়ে ৪ লাখের বিশাল রিজার্ভফোর্স আছে৷ তাদের কাছে ট্যাংক আছে আড়াই হাজারের উপরে৷ অধিকাংশ ট্যাংক তাদের নিজেদের তৈরী কুখ্যাত মারকাভা মেইন ব্যাটল ট্যাংক৷ ইসরায়েসের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই বিশাল ট্যাংক বহরের ভুমিকা রয়েছে৷ ইসরায়েলের বিমান বাহিনীতে যুদ্ধ বিমান আছে ৩শ এর মতো৷ এতোদিন F 16 এবং F 15 সার্ভিস দিয়ে আসলেও সম্প্রতি তাতে অত্যাধুনিক F 35 যুক্ত হয়েছে৷ তবে মাত্র ৫টি সাবমেরিন আর ৪টি করভেট নিয়ে ইসরায়েলের নৌবাহিনী একেবারেই দুর্বল৷ ইসরায়েল তাদের পারমানবিক হামলার জন্য তৈরী করা ব্যালস্টিক মিসাইলগুলো ভুমধ্যসাগরের উপর পরীক্ষা চালায়৷

তালিকার ৪ নাম্বারে আছে ২য় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম পরাজিত পরাশক্তি ইতালি৷ ইতালি ভুমধ্যসাগরের সবথেকে গুরুত্বপুর্ণ স্থানে অবস্থিত৷ ভুমধ্যসাগরের সবেথেকে বেশি অঞ্চলও তাদের দখলে৷ বর্তমানে ইতালির কাছে ১ লাখ ৭৫ হাজার এক্টিভ এবং ১ লাখ ৮২ হাজার রিজার্ভ মিলে ৩ লাখ ৫৭ হাজারের বিশাল বাহিনী রয়েছে৷ সেই সাথে নিজ দেশে উৎপাদিত ট্যাংক আছে ২০০টির বেশি৷ এগুলো হচ্ছে C1 Ariete. বিমান বাহিনীতে যুদ্ধবিমান আছে ২০০টির উপরে৷ ইতালির প্রাধান ফাইটারগুলি হচ্ছে নিজেদের উৎপাদিত ইউরেফাইটার টাইফুন এবং টর্নেডো৷ ভৌগলিকভাবে ইতালি ভুমধ্যসাগরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো দখলে রাখায় তাদের নৌবাহিনীতে দুটি বিমানবাহি যুদ্ধ জাহাজ আছে৷ তাদের কাংচে নৌবাহিনীর সবথেকে শক্তিশালী যুদ্ধ জাহাজ ডেসট্রয়ার আছে ৪টি৷ ডেসট্রয়ারের থেকে তুলনামুলক ছোট যুদ্ধজাহাজ ফ্রিগেইট আছে ১২টি৷ তবে তাদের কোন করভেট নেই৷ ভুমধ্যসাগরের যেকোন গন্ডগোলে অবশ্যই কোন না কোন ভাবে ইতালির নামটি উঠে আসে৷

তালিকার ৩ নাম্বারে আছে বর্তমান সময়ে ভুমধ্যসাগর কাঁপানো তুরস্ক! তুরস্কের অবস্থান ভুমধ্যসাগরের উত্তরপূর্ব দিকে৷ ভুমধ্যাগর আর কৃষ্ণসাগরের সংযোগ পথ তুর্কিপ্রণালী তুরস্কের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত৷ অর্থাৎ ভুমধ্যসাগর থেকে কৃষ্ণসাগরে যাতায়াত তুরস্ক নিয়ন্ত্রণ করে৷ তুরস্কের সামরিক বাহিনীতে মোট ৭ লাখ ৩৫ হাজার সৈন্য রয়েছে৷ এটা ভুমধ্যসাগরের ইউরোপীয় অংশের বৃহত্তম সামরিক বাহিনী৷ সামরিক বাহিনীর মতো ভুমধ্যসাগরের ইউরোপীয় অংশের সবথেকে বড় ট্যাংক বহরও তুরস্কের হাতে রয়েছে৷ বর্তমানে তুরস্কের কাছে ট্যাংক আছে আড়াই হাজারের উপরে৷ এগুলো হচ্ছে জার্মানির লিওপার্ড 2 এবং আমেরিকার প্যাটোন ট্যাংক৷ তবে তারা নিজ দেশেই আলটাই ট্যাংকের উৎপাদন শুরু করেছে৷ তুরস্কের কাছে জঙ্গি বিমান আছে ২শ এর উপরে৷ তাদের বাহিনীর সবথেকে শক্তিশালী ফাইটার আমেরিকান এফ 16 বিমানকে তারা নিজ দেশেই উৎপাদন করে৷ সম্প্রতি তারা ইতালির প্রযুক্তি ধার করে T 129 এ্যাটাক হেলিকপ্টার তৈরী করেছে৷ এছাড়াও তাদের দুটি প্রতিষ্ঠান কমব্যাট ড্রোন নির্মান করে৷ তুরস্কের দুই দিকে দুই সাগর থাকলেও এখনও তারা তাদের নৌবাহিনীকে প্রয়োজন অনুযায়ী শক্তিশালী করতে পারেনি৷ বর্তমানে তাদের নৌবাহিনীতে ১৬টি ফ্রিগেইট এবং ১০টি করভেট যুদ্ধ জাহাজের সাথে ১২টি সাবমেরিন রয়েছে৷ এগুলোর অধিকাংশই জার্মানির তৈরী৷ বর্তমানে তুরস্কের সাথে ভুমধ্যসাগের তীরবর্তি অন্যসব রাষ্ট্র ফ্রান্স, লিবিয়া, মিশর, সিরিয়া, ইসরায়েল এবং গ্রিসের দ্বন্দ চলছে৷ আমেরিকা ব্যতিৎ আর কোন রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রে এতো বেশি দ্বন্দ নেই৷

তালিকার ২য় স্থানে আছে আফ্রিকার দেশ মিশর৷ প্রাচীনকালে ইউরোপীয়রা ভুমধ্যসাদর পাড়ি দিয়ে আফ্রিকা এবং এশিয়াতে প্রবেশ করতো মিশরের মাধ্যমে৷ বর্তমানে ভুমধ্যসাগর থেকে লোহিত সাগর বা আরব সাগরে চলাচলের পথ সুয়েজ খাল মিশরের মালিকানাধীন৷ বিশ্বের অধিকাংশ বাণিজ্য এই পথেই হয়৷ বর্তমানে মিশরের কাছে ৪ লাখ ৪০ হাজার এক্টিভ এবং ৪ লাখ ৮০ হাজার রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে৷ মিশরের কাছে মোট ট্যাংক আছে প্রায় ৪ হাজার ৩শ! এটা ভুমধ্যসাগরের বৃহত্তম ট্যাংকবহর! আর গোটা বিশ্বে ৪র্থ বৃহত্তম ট্যাংক বহর! তাদের ট্যাংকবহরে আছে আমেরিকান M1 Abrams থেকে শুরু করেন নিজ দেশে উৎপাদিত Ramses II. মিশরের বিমান বাহিনীতে জঙ্গি বিমান আছে তিনশোর উপরে৷ প্রধান ফাইটারগুলো হচ্ছে, রাফাল, Mig 29, F 16 এবং মিরেজ সিরিজ৷ মিশর তাদের হাতে থাকা সমুদ্রসীমার গুরুত্ব বিবেচনা করে, নৌবাহিনীতে দুটি লাইট এয়ারক্রাফট কেরিয়ান যুক্ত করেছে৷ এছাড়াও অন্যান্য শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজগুলো হচ্ছে ৭টি ফ্রিগেই, ৭টি করভেট এবং ৮টি সাবমেরিন৷ মিশর হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী৷ তবে পার্শবর্তি লিবিয়াকে নিয়ে ভুমধ্যসাগরের আরেক মুসলিম দেশ তুরস্কের সাথে বড় ধরনের দ্বন্দ চলছে, যা যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷

তালিকার এক নাম্বারে আছে ভুমধ্যসাগরের পরাশক্তি ফ্রান্স! সাড়ে চার লাখের বিশাল সৈন্যবাহিনীর সাথে আছে নিজ দেশেই উৎপাদিত ৪শ এর উপরে AMX Leclerc মেইন ব্যাটল ট্যাংক৷ বিমান বাহিনীতেও নিজ দেশ উৎপাদিত রাফালকে সঙ্গ দেয় মিরেজ সিরিজের ফাইটারগুলো৷ নৌবাহিনীতে আছে ভুমধ্যসাগরের সবথেকে শক্তিশালী এয়ারক্রাফট কেরিয়া চার্লস ডি গল৷ আরও তিনটি এয়ার ক্রাফট কেরিয়ারের সাথে শক্তিশালী ডেসট্রয়ার আছে ১১টি! এছাড়াও ১১টি ফ্রিগেই এবং ৯টি সাবমেরিন আছে৷ এরমধ্যে ব্যালস্টিক মিসাইলবাহি ৪টি সাবমেরিন আছে! এই চারটি সাবমেরিন থেকে যদি তালিকার বাকি চারটি দেশে ব্যালস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করে পারমানবিক হামলা করা হয়, তাহলে সবগুলো দেশই তাদের বিশাল সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনী নিয়ে কয়লা হয়ে যাবে৷ ফ্রান্সের সাথে কারও তেমন বিরোধ না থাকলেও সম্প্রতি লিবিয়া এবং গ্রিস ইস্যুতে তুরস্কের সাথে দ্বন্দ তৈরী হয়েছে৷ এছাড়াও ভুমধ্যসাগরের প্রবেশদ্বার জিব্রাল্টার প্রণালীতে ফ্রান্স বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে৷

প্রিয় দর্শক, ভুমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত আরেক দেশ লিবিয়াকে ধ্বংস করতে এখানকার কয়েকটি দেশের সরাসরি ভুমিকা ছিল৷ কিন্তু এখন সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত লিবিয়াকে নিয়েই ফ্রান্স, তুরস্ক, মিশর এবং ইতালির দ্বন্দ চলছে৷ এছাড়াও গ্রিস ইসুতেও ভুমধ্যসাগর বেশ উত্তপ্ত৷ অনেকেই বলেন এই দেশগুলো ন্যাটোভুক্ত, তাই যত উত্তেজনা থাকুক না কেন কখনই তা যুদ্ধে গড়াবে না৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে এই দেশগুলো এতো বিপুল সামরিকশক্তি কেন রেখেছে? আর কেনবা সামরিকশক্তি আরও বৃদ্ধি করছে?

Tags
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close