রাফাল যুদ্ধ বিমান। ভারতের রাফাল যুদ্ধ বিমান
রাফাল হচ্ছে আমাদের উপমাহাদেশের সবথেকে বেশি আলোচিত এবং সমালোচিত বিমান৷ কেননা সম্প্রতি খুবই হইচই করে ভারতের সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে বিমানটি৷ এছাড়াও বাংলাদেশের বিমান বাহিনীতে যুক্ত হওয়ারও প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে৷ কারও কাছে এটাই বর্তমান সময়ের সেরা ফাইটার, আবার কারও কাছে এটা যেন কিছুই না৷ আর এরকম ব্যক্তিগত ধারনায় ভর করে আলোচনা সমালোচনা হওয়ায় রাফালের প্রকৃত ক্ষমতা নিয়ে একপ্রকার ধোয়াশা আর বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ আমাদের আজকের এই ভিডিওটিতে রাফালের ক্ষমতা, গতি, অস্ত্রবহন ক্ষমতা এবং যুদ্ধের মাঠের সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করবো৷
রাফালের জন্ম হয়েছে ইউরোফাইটার টাইফুনের হতাশার উপর৷ এক সময় ইউরোফাইটার টাইফুনের প্রজেক্টে ফ্রান্স যুক্ত ছিল৷ কিন্তু ইউরোফাইটার টাইফুনের বিভিন্ন ইস্যূতে ব্রিটেন এবং জার্মানির সাথে ফ্রান্সের মতের অমিল সৃষ্টি হয়৷ বিশেষ করে ফ্রান্স চাচ্ছিল এমন একটি বিমান যেটা বিমান বাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনীও যুদ্ধজাহাজে ব্যবহার করতে পারবে৷ যার কারনে ফ্রান্স ইউরোফাইটার টাইফুনের প্রোজেক্ট থেকে বেড়িয়ে যায়৷ আর হাতে নেয় নতুন এই রাফাল ফাইটারের প্রজেক্ট৷
রাফালকে তৈরী করেছে ফ্রান্সের দাসো বা ডাসল্ট এভিয়েশন৷ উৎপাদনকারি কোম্পানির নামানুসারে এর পুরো নাম দেওয়া হয়েছে দাসো বা কডাসল্ট রাফাল৷ অতীতে ডাসাল্ট এভিয়েশন মিরাজ সিরিজের ফাইটার এবং বোম্বারগুলো নির্মান করেছে৷ আরব ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের সফলটার অন্যতম দাবীদার ডাসল্ট কোম্পানির মিরাজ বিমানগুলো৷ বর্তমানে মধ্যেপ্রাচ্যের অনেক দেশ মিরাজ বিমান ব্যবহার করছে৷ মিরাজকে মরুভূমির সবথেকে সফল বিমান বলা যায়৷ মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশের কাছেই মিরাজ বিমান রয়েছে৷ দুই দেশই গ্রাউন্ড এটাক কিংবা আকাশ যুদ্ধে এগুলো ব্যবহার করে৷ এতো কথা বলা কারন হচ্ছে, ডাসল্ট এভিয়েশনের পূর্বের সাফল্য তুলে ধরা৷ অর্থাৎ রাফাল এমন এক প্রতিষ্ঠানের হাতে নির্মিত যাদের আগের বিমানগুলো যুদ্ধের মাঠ অত্যান্ত সফল৷
ডাসল্ট ছাড়াও বিমানটি নির্মানে সাহায্য করেছে আরও দুই ফরাসী টেখ জায়ান্ট কোম্পানী থালেস এবং জাফরান৷ এখানে বলে রাখি, বাংলাদেশের একমাত্র স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু ১ নির্মান করেছে এই থালেস গ্রুপের সাবসিডিয়ারি থালেস এলেনিয়া স্পেস৷ আর এসব কারনেই বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে রাফাল বিক্রি করতে ফরাসি লবিং অনেক শক্ত৷
আমাদের উপমহাদেশে রাফালকে মূলত ফাইটার হিসেবেই তুলে ধরা হয়৷ তবে রাফালকে কেবল ফাইটার বলাটা ভুল৷ কেননা গ্রাউন্ট এ্যাটাক, মেরিটাইম স্ট্রাইক কিংবা পারমানবিক হামলা সবকাজেই রাফাল সমান দক্ষ৷ আর একরনেই ডাসল্ট কোম্পানি রাফালকে Multirole না বলে বরং Omnirole বলে প্রচার করে৷ অর্থাৎ সব দিকেই সমান দক্ষ৷
রাফাল দুই ইঞ্জিনের ডেল্টা উইং ক্যানার্ড এয়ারক্রাফট৷ ডেল্ট উইং বলতে ত্রিভুজাকৃতির ডানা বিশিষ্ট বিমানকেই বুঝায়৷ ডাসাল্ট এভিয়েশনে মিরাজগুলো অধিকাংশই ডেল্টা উইং ছিল৷ আর ক্যানার্ড বলতে সামনের অংশের ছোট পাখনার মতো অংশকে বুঝায়৷ এগুলো বিমানটিকে ম্যানুভারে সাহায্য করে৷
রাফালের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এর ভ্যারিয়ান্টগুলো৷ ভ্যারিয়ান্টের কারনে ক্ষমতা এবং পারফর্মেন্স বড় রকমের ব্যবধান দেখা যায়৷ রাফালের মোট ১২টি ভ্যারিয়ান্ট থাকলেও সার্ভিসে ৩টি ভ্যারিয়ান্ট রয়েছে৷ বিমান বাহিনীর ব্যবহৃত ভ্যারিয়ান্ট হচ্ছে B এবংC. আর নৌবাহিনীর ভ্যারিয়ান্ট হচ্ছে M
চলুন তাহলে রাফালের গতি নিয়ে জানা যাক৷ রাফালে রয়েছে দুটি সাফরান M88 টার্বোফ্যান ইঞ্জিন৷ এগুলোর সাহায্যে বিমানটি Mach 1.8 বা ঘন্টায় ২২২৩ কিলোমিটার গতি তুলতে পারে৷ তবে এই গতি অনেক উপরে থাকার সময় তুলতে পারে৷ মাটির কাছাকাছি এর সর্বচ্চ গতি ঘন্টায় ১৩৯০ কিলোমিটার৷
যুদ্ধের সময় বিমানটির সর্বচ্চ কমব্যাট রেঞ্জ ১৮৫০ কিলোমিটার৷ তবে অস্ত্রশস্ত্র এবং এক্সটার্নাল ট্যাংকের উপর রেঞ্জের তাড়তম্য ঘটে৷ আর ভ্রমণের জন্য ফেরি রেঞ্জ ৩৭০০ কিলোমিটার৷
এবারে আসি বিমানটিতে কি কি অস্তের রয়েছে সেই বর্ণনায়৷ বিমান বাহিনীর ভার্সনগুলোতে হার্ডপয়েন্ট থাকে ১৪টি৷ আর নৌবাহিনার ভার্সনে হার্ডপয়েন্ট আছে ১৩টি৷ অর্থাৎ বিমানটি মোট ১৩ বা ১৪ জায়গায় অস্ত্র নিতে পারে৷ মোট ৯৫০০ কেজি পর্যন্ত ভার বহন করতে পারে বিমানটি৷
আকাশে শত্রুর বিমানকে ধ্বংসের জন্য Magic II, MICA এবং Meteor এয়ার টু এয়ার মিসাইল বহন করে৷ এর মধ্যে মিটিওর এর চাহিদা সবথেকে বেশি৷ এটা লঙ রেঞ্জ এক্টিভ রাডার বিভিআর মিসাইল৷ রাফাল ছাড়াও ইউরোফাইটার টাইফুন এবং গ্রিপেন এই মিসাইলটি ব্যবহার করে৷ যার কারনে চাহিদা মতো মিসাইলটি পাওয়া যায় না৷ বলা যায় মিটিওর ছাড়া রাফাল বা টাইফুন লখ এবং দন্তহীন বাঘের মতো৷
গ্রাউন্ড এ্যাটাকের জন্য বিমানটিতে রয়েছে স্ট্রম শ্যাডো কিংবা এ্যাপাচি ক্রুইজ মিসাইলসহ ৬ ধরনের মিসাইল ও গাইডেড বোমা৷ এছাড়া এটা ASMP ক্রুইজ মিসাইল নিক্ষেপ করে৷ আর এই মিসাইলটিতে পারমানবিক ওয়ারহেড যুক্ত করা আছে৷ টেক দুনিয়া রাফাল
জাহাজ ধ্বংসের জন্য বিমানটি Exocet এন্টিশিপ মিসাইল বহন করে৷এবারে আসি বিমানটির এভিওনিক্সের বর্ণনায়৷ বিমানটির প্রধান রাডার হচ্ছে থালেসের RBE2 AESA রাডার৷ এটা খুবই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাডার৷ ১১০ কিলোমিটার দূর থেকেই ৪০টি টার্গেটকে ট্রাক করতে পারে৷ আর আক্রমন করতে পারে একসাথে ৮টি টার্গেটকে৷ এছাড়াও ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ারের জন্য আছে থ্যালেসের স্পেক্ট্রা সিস্টেম৷ এগুলো শত্রুর রাডার এবং মিসাইলকে বিভ্রান্ত করতে ব্যবহৃত হয়৷ পাশাপাশি একটি ইনফ্রারেড সার্চ এন্ড ট্রাক সিস্টেম রয়েছে৷
সবশেষে আসি দামের ব্যপারে৷ ভ্যারিয়ান্ট অনুযায়ী প্রতিটি বিমানের মূল্য ৬৮ থেকে ৭৯ মিলিয়ন ইউরো হয়ে থাকে৷ techduniyabd
আফগানিস্তান যুদ্ধ, ইরাক আক্রমণ, লিবিয়া ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং মালি আক্রমনে বিমানগুলো সফলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে৷
বর্তমানে ফরাসী বিমানবাহিনীতে ১০২টি বিমান রয়েছে৷ এছাড়াও ফরাসী এয়ারক্রাফট কেরিয়ার চার্লস ডি গলে ৪৪টি রাফল রয়েছে৷
মিশরের হাতে ২৪টি রাফাল আছে৷ কাতারের কাছে আছে ২৩টি৷ ভারত ৩৬টি রাফাল অর্ডার করেছে৷ যেগুলো ভারতে পৌছাতে শুরু করেছে৷
ভবিষ্যতে মালেশিয়া, সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, আরব আমিরাত এবং বাংলাদেশের বিমান বাহিনীতে যুক্ত হতে পারে বিমানটি৷
প্রিয় দর্শক, আধুনিক মাল্টিরোল ফাইটার হিসেবে বিমানটি কেমন সেই সিদ্ধান্ত আপনার উপরেই ছেড়ে দিলাম৷ ভারতীয় বিমান বাহিনী কতটুকু সফলভাবে বিমানটিকে ব্যবহার করতে পারবে বলে আপনি মনে করেন? আপনার মতামত কমেন্টে জানান৷