মিসাইল

পৃথিবীর সবথেকে কুখ্যাত মিসাইল। স্কাড মিসাইল

পৃথিবীর সবথেকে কুখ্যাত মিসাইল হচ্ছে পাঁচ যুগ আগে রাশিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরী স্কাড মিসাইল৷ যুদ্ধ ময়দানে সব থেকে  বেশি ব্যবহার করা মিসাইল এটি৷ কর্নেল গাড্ডাফি এই মিসাইল দিয়ে ইতালিতে হামলা করেছিল৷ সাদ্দাম হোসাইন ইসরায়েল এবং সৌদি আরবকে টার্গেট করে এই মিসাইল ছুড়েছিল৷

পাকিস্তানের সামরিক ঘাটি ধ্বংস করতে আফগানিস্তান এই মিসাইল নিক্ষেপ করেছিল৷ শুধু আফগান যুদ্ধে আড়াই হাজার স্কাড মিসাইল ব্যয় হয়েছিল যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বচ্চ কোন অস্ত্রের ব্যবহার৷ ইরান এবং ইরাক একে অপরের দিকে তাক করে এই মিসাইল দিয়ে হামলা করেছিল ৷

বর্তমানে ইরান, উত্তরকোরিয়া, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, মিশর, কিউবা, মায়ানমারসহ প্রায় ২০টি দেশ এই মিসাইল ব্যবহার করে৷ মজার ব্যপার হচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়নের শত্রু আমেরিকাও সোভিয়েতদের তিনশোটি মিসাইল কিনে রেখেছে৷ আরও মজার বিষয় হচ্ছে, সোভিয়েতদের তৈরী এই মিসাইল রাশিয়াসহ সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্য কোন দেশই এই মিসাইল এখন আর ব্যবহার করে না৷ চলুন তাহলে পুরো ভিডিওটি দেখতে দেখতে এই মিসাইল সম্পর্কে আরও অদ্ভুত সব তথ্য জানা যাক৷

স্কাড মিসাইল প্রথম তৈরী করা ১৯৫৭ সালে৷ মজার ব্যপার হচ্ছে এর নাম কিন্তু স্কাড নয়৷ এর প্রকৃত নাম R 11 এবং R 17 কিন্তু ন্যাটোর গোয়েন্দারা এর নাম দেয় স্কাড৷ গত ছয় দশক ধরে এই নামেই সবাই মিসাইলগুলোকে চিনে আসছে৷ স্কাড মূল একই প্রযুক্তি দ্বারা তৈরী অনেকগুলো মিসাইলকে একত্রে বুঝায়৷

যেমন উত্তর কোরিয়ার হসোং মিসাইল, ইরানের সাহাব এবং কিয়াম মিসাইল কিংবা ইয়েমের বোরকান মিসাইল সবই স্কাড মিসাইলের অন্ত্রভুক্ত৷ আসলে সোভিয়েত ইউনিয়ন গনহাড়ে এই মিসাইল বিক্রি করেছিল৷ পরে বিভিন্ন দেশ মিসাইগুলোকে আরও উন্নত করতে থাকে৷

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

স্কাড মিসাইলকে A B C D এই চার ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয়৷ D ক্যাটেগরির মিসাইল সব থেকে উন্নত৷ স্কাড মিসাইলের রেঞ্জ ১৮০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে৷ এ কারনেই সিরিয়ার কাছে থাকা মিসাইলগুলো দিয়ে তুরস্কের রাজধানী আংকারা কিংবা ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবে আঘাত করা সম্ভব৷ আর বোমা বহন করতে পারে প্রায় এক হাজার কেজি৷

মিসাইলগুলো প্রতি সেকেন্ডে ১.৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে৷ অর্থাৎ শব্দের থেকে পাঁচগুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে এই মিসাইলগুলো৷ যার ফলে এই মিসাইলগুলো আঘাত হানার আগে কোন শব্দই শুনতে পাওয়া যায় না৷ একারনেই মিসাইলগুলোর আক্রমনে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সব থেকে বেশি ব্যবহৃত মিসাইল হচ্ছে এই স্কাড মিসাইল৷ মিসাইলগুলো প্রথম ব্যবহার হয় ইরান ইরাক যুদ্ধে৷ ইরাক প্রায় দুইশো মিসাইল দিয়ে ইরানে হামলা করে কয়েকশো নিরীহ মানুষ হত্যা করে, আর আহত হয় আরও হাজার হাজার মানুষ৷

তখন ইরান লিবিয়া এবংউত্তরকোরিয়ার কাছে স্কাড মিসাইল কিনে ইরাকের রাজধানী বাগদাদ এবং কিরকুক শহরে হামলা করে৷ এভাবে বেশ কয়েক বছর ইরাক আর ইরানের মধ্যে স্কাড মিসাইল বনাম স্কাড মিসাইলের লড়াই চলে৷

এছাড়াও পরবর্তিতে ইরাক প্রায় ডজনখানেক মিসাইল দিয়ে সৌদিআরব এবং ইসরায়েলে হামলা করে৷ মুলত সাদ্দাম হোসাইনের মিসাইল বলতে স্কাড মিসাইলকেই বুঝায়৷ তবে ইরানও অনেক বেশি পরিমান স্কাড মিসাইল ব্যবহার করে থাকে৷ বর্তমানে ইরানের তৈরী মিসাইল সাহাব সিরিজ এবং কিয়াম সিরিজ এই স্কাড মিসাইলেরই বংশধর৷ এছাড়াও ইরান ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধাদের কাছে যে বোরকান মিসাইল দিয়ে থাকে সেটাও স্কাড মিসাইলের উন্নত রূপ৷

এই বাইরে আফগানিস্তানের কাছে বিপুল পরিমানে স্কাড মিসাইল ছিল এক সময়৷ এমনকি ১৯৮৮ সালে এই মিসাইল দিয়ে পাকিস্তানী সেনাদের উপর হামলা করেছিল আফগানা সেনাবাহিনী৷ তবে আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধের সময় আফগানিস্তান সেনাবাহিনী এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন মিলে প্রায় আড়াই হাজার স্কাড মিসাইল ব্যবহার করে মুজাহিদিন যোদ্ধাদের উপর৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কোন অস্ত্রই এতো পরিমানে ব্যবহার করা হয়নি৷ যার কারনে মুজাহিদিনরা কোনঠাসা হয়ে পরেছিল৷

এর বাইরে স্কাড মিসাইলের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হিসেবে ছিল, লিবিয়ার নেতা কর্নেল গাড্ডাফি আশির দশকে ইতালিসহ ইউরোপের অন্যান্য শত্রুদেশে এই মিসাইল নিক্ষেপ করতো৷ আর সাম্প্রতিক সময়ে স্কাডের ব্যবহার করেছে ইয়েমের হুথি যোদ্ধারা সোদি আরবের বিরুদ্ধে এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ তার বিদ্রোহিদের বরুদ্ধে৷

বর্তমনে অনেক দেশই এই মিসাইলকে তাদের ডিফেন্সে প্রধান অবলম্বন হিসেবে রেখেছে৷ বিশেষ করে ইরান উত্তরকোরিয়া এবং কিউবা উল্লেখযোগ্য৷ ইরান নিয়মিতই এই মিসাইলগুলোর উন্নতি করে যাচ্ছে৷ উত্তরকোরিয়া এই মিসাইলগুলো দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানকে চাপে রেখেছে৷ আর কিউবার কাছে থাকা মিসাইল দিয়ে আমেরিকার পূর্ববর্তি যে কোন শহরে হামলা করা সম্ভব৷

সবশেষে বলা যায় বর্তমান সময়ের সবথেকে কার্যকরী অস্ত্র হচ্ছে এই স্কাড মিসাইল৷

Tags
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close