দেশ পরিচিতিবেলারুশসামরিকশক্তি

বেলারুশের সামরিকশক্তি।বেলারুশ দেশ পরিচিতি

চেরনোবিলের ভয়বহ পারমানবিক দুর্ঘটনার কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি৷ Tech Duniya দুর্ঘটনাটি বর্তমান ইউক্রেনের সীমান্তে হলেও এটায় সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেলারুশ৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলে রাশিয়ার পরপরই বেলারুশ সবথেকে বেশি সোভিয়েত ইউনিয়নের ঐতিহ্য ধারন করেছে৷ এমনকি সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির নামকে জীবিত রাখতে বেলারুশ তাদের গোয়েন্দা বাহিনীর নামও রেখেছে কেজিবি৷ সামরিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে রাশিয়ার পরপরই বেলারুশ হচ্ছে ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবথেকে বড় প্রতিপক্ষ৷ বেলারুশকে ছোটখাত রাশিয়া বললেও তাই ভুল হবে না৷ এমনকি বেলারুশ নামটিরও অর্থ সাদা রাশিয়ান৷ আমাদের আজকের ভিডিওটিতে এই বেলারুশের সামরিকশক্তি এবং ইউরোপে তাদের কৌশলগত প্রভাব তুলে ধরবো৷বেলারুশের সামরিকশক্তি কতটা। ন্যাটোর বড় প্রতিপক্ষ বেলারুশের সামরিক শক্তি। বেলারুশ দেশ পরিচিতি। টেক দুনিয়া

বেলারুশের সামরিকশক্তি এবং প্রভাব বুঝার জন্য প্রথমেই এর ভৌগলিক অবস্থান ব্যাখা করা যাক৷ বেলারুশ উত্তর পূর্ব ইউরোপের বাল্টিক অঞ্চলে অবস্থিত৷ এর উত্তরে রয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই দেশ লিথুনিয়া এবং লাটাভিয়া৷ পূর্বে রয়েছে রাশিয়া৷ পশ্চিমের পোল্যান্ড৷ পোল্যান্ডের রাজধানী ভারসাভ বেলারুশ সীমান্তে অবস্থিত৷ যেখানে ন্যাটো বিরোধী ভারসাভো বা ওয়ারশো প্যাক্ট গঠিত হয়েছিল৷ বেলারুশের দক্ষিণে রয়েছে ইউক্রেন৷ ইউক্রেনের চেরনোবিল বেলারুশ সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ চেরনোবিলের  বিস্ফোরনের পর মোট ক্ষতির ৭০% হয়েছে বেলারুশের৷ এই দুর্ঘটনার ফলে বেলারুশ থেকে অসংখ্য মানুষ তৎকালিন পার্শবর্তি রাজ্য রাশিয়া, ইউক্রেন, লিথুনিয়া এবং লাটাভিয়ায় চলে যায়৷ যেই প্রভাব এখনও বেলারুশ বহন করছে৷

Belarus-military-power
Belarus Military Power

বেলারুশের আয়তন ২, ০৭, ৫৯৫ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা এক কোটির কাছাকাছি৷ অন্যান্য বাল্টিক দেশগুলোর মতো বেলারুশেরও জনসংখ্যা কমছে৷ বেলারুশের ৮৪% মানুষ বেলারাশিয়ান হলেও ৭০% মানুষের ভাষা রাশিয়ান৷ তবে বেলারুশ এবং রাশিয়ান ভাষা এবং সংস্কৃতির মিল অনেক৷ বেলারুশের জন্ম থেকেই দেশটিকে শাসন করছে আলেকজান্ডার লুকাশেংকো৷ তিনি ঘোরতর ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী৷ যার কারনে পশ্চিমারা তাকে ইউরোপের সর্বশেষ স্বৈরশাসক বলে৷ আলেকজান্ডার লুকাশেংকো এতোই রগচটা মানুষ যে মাঝে মাঝে তার ঘনিষ্ট মিত্র ভ্লাদিমির পুতিনের সাথেও বিবাদে জড়িয়ে পরে৷ বর্তমানে আলেকজান্ডার লুকাশেংকো বেলারুশের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক৷ techduniyabd

বেলারুশের সামরিকবাহিনীতে সক্রিয় সৈন্য আছে ৪৫ হাজার৷ তবে সামরিক ট্রেনিংপ্রাপ্ত রিজার্ভ সৈন্য আছে সাড়ে ৩ লাখ! এতো বিপুল সংখ্যক রিজার্ভ সৈন্য থাকার কারন হচ্ছে, অতীতে বেলারাশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম প্রভাবশালী সামরিক ইউনিট ছিল৷ 

পুরো ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

বেলারুশের সামরিক বাহিনীতে সোভিয়েত এবং রাশিয়ান অস্ত্রে ভরা৷ বেলারুশকে রাশিয়ার সবথেকে ঘনিষ্ট সামরিক মিত্র ধরা হয়৷ রাশিয়ার প্রধান বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সুখোইয়ের প্রতিষ্ঠাতা পাভেল সুখোই বেলারুশিয়ান ছিলেন৷

বেলারুশের কাছে ট্যাংক আছে ৫৩২টি৷ সবগুলো ট্যাংক বিখ্যাত T 72 মেইনব্যাটল ট্যাংক৷ অর্ধেক ট্যাংক উত্তরাধিকারসূত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে থেকে পাওয়া৷ বাকি অর্ধেক রাশিয়ার কাছে থেকে কেনা৷ বেলারুশের কাছে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ এবং শক্তিশালী ট্যাংক বহর রয়েছে৷ বেলারুশের কাছে ট্যাংক ছাড়া অন্যান্য আর্মার্ড ভেহিকল আছে দেড় হাজারের উপরে৷ আর্টিলারি আছে ৭শর মতো৷ এছাড়াও ২৩৮টির বিপুল সংখ্যক মাল্টিপল রকেট লঞ্চার আছে৷ এক কথায় বেলারুশ ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী গ্রাউন্ড ফোর্স৷ মুলত সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদেরকে এভাবে তৈরী করেছিল৷ কেননা পশ্চিমা শক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমণ চালালে বেলারাশিয়া দিয়ে প্রবেশ করতে হতো৷ Tech Duniya

বেলারুশের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম হতবাক করার মতো! বর্তমান সময়ের সবথেকে সেরা মিসাইস সিস্টেম S 400 আছে বেলারুশের হাতে৷ S 400 ব্যবহারকারিদের মধ্যে বেলারুশ সবথেকে দুর্বল এবং দরিদ্র দেশ! মোট দুই ব্যাটেরি S 400 আছে বেলারুশের কাছে৷ S 400 এর আগের ভার্সন S 300 ২৪ ব্যাটেরি৷ এগুলোর অর্ধেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ভাগে পাওয়া৷ বাকি অর্ধেক রাশিয়ার কাছে কেনা৷ এগুলো ছাড়াও শর্ট রেঞ্জ এবং মিডিয়াম রেঞ্জের টর, ওসা এবং বুক মিসাইল সিস্টেম রয়েছে৷

বেলারুশের বিমান বাহিনীর গৌরবজ্জল ইতিহাস রয়েছে৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের ২৬তম এয়ার আর্মির ইউনিটটিকে নিয়ে বেলারুশের এয়ারফোর্স গঠিত হয়৷ বর্তমানে বেলারুশের বিমান বাহিনীতে থাকা সবথেকে শক্তিশালী বিমান হচ্ছে সুখোই Su 30৷ মাত্র ৪টি Su 30 বেলারুশের হাতে পৌছেছে৷ বাকিগুলো অর্ডারে আছে৷ এরপরই আছে সোভিয়েত মাল্টিরোল ফাইটার মিগ 29৷ ৩৯টি মিগ 29 আছে বেলারুশের হাতে৷ তবে বেলারুশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে বিপুল সংখ্যক Su 27 বিমান পেয়েছিল৷ যেগুলো এখন রিজার্ভে আছে৷ এছাড়াও গ্রাউন্ড এ্যাটাকের জন্য সুখোই Su 25 বিমান রয়েছে৷ মোট ৬৮টি সুখোই Su 25 আছে তাদের কাছে৷ এছাড়াও বেশিরুশের কাছে দুর্লভ ইলিউশিন II 76 বিমান রয়েছে৷

বেলারুশের হেলিকপ্টার বহরও দেখার মতো৷ কুখ্যাত সোভিয়েত এ্যাটার হেলিকপ্টার Mi 24 হিন্দ আছে ২১টি৷ আর Mi 8 আছে ৩৬টি৷ পৃথিবীর মাত্র যে কয়েক দেশ Mi 26 এর মালিক হতে পেরেছে, বেলারুশ তাদের একটি৷ এটা বিশ্বের সর্ব বৃহৎ হেলিকপ্টার৷

বেলারুশের কোন সমুদ্রসীমা না থাকায় নৌ বাহিনী নেই৷ তবে তাদের স্পেশাল ফোর্সের খ্যাতি রয়েছে৷ কেননা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের সময় তারা কুখ্যাৎ স্পেৎসনাজের কমান্ডোদের ভাগে পেয়েছিল৷

রাশিয়ার ঘনিষ্ট মিত্র হওয়ায় বেলারুশ পশ্চিমাদের অন্যতম প্রধান টার্গেট৷ বিশেষ করে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেংকো৷ বেলারুশের সামরিকশক্তির কারনে এবং রাশিয়ার ছত্রছায়ায় থাকায় ন্যাটোর জন্য বেলারুশে সরাসরি কোন প্রকার আক্রমণ চালানো প্রায় অসম্ভব৷ তাই পশ্চিমারা সর্বদাই চেষ্টা করে বেলারুশে মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে লুকাশেংকোকে হটিয়ে নিজেদের বলয়ে আনতে৷ আবার কেউ কেউ মনে করেন, বেলারুশ লুকাশেংকোর হাত ধরে দ্রুতই রাশিয়া সাথে একিভুত হয়ে রুশ ফেডারেশনে যোগ দিবে৷ প্রিয় দর্শক, বেলারুশের ভবিষ্যত কোন দিকে যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন৷

টেক দুনিয়ায় প্রকাশিত লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

Tags
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close