বাংলাদেশ বনাম মায়ানমার সামরিক শক্তি।
দক্ষিণ এশিয়ার দুই উত্তেজনাপূর্ণ দেশ হচ্ছে মায়ানমার এবং বাংলাদেশ৷ রোহিঙ্গা সংকট এবং বঙ্গোপসাগরে জলসীমার মালিকানা নিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে দুই দেশের মধ্যে৷ আর এই আঞ্চলিক রাজনীতিতে আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীনের মতো পরাশক্তি দেশগুলোও জড়িয়ে যাচ্ছে৷ যদিও এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোন সংঘাত হয়নি৷ তবে দুই দেশ পরোস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়৷ প্রশ্ন হলো, সামরিক এবং কৌশলগত দিক দিয়ে কোন দেশ কি অবস্থানে রয়েছে? আমাদের আজকের ভিডিওটিতে থাকছে ২০২১ সালে এসে বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের সামরিক শক্তি কি অবস্থায় আছে তার একটি তুলনা৷ তাহলে চলুন বাংলাদেশ নাকি মায়ানমার কে এগিয়ে তা জানতে পুরো ভিডিওটি দেখা যাক৷
সামরিকশক্তির তুলনায় যাওয়ার আগে ভৌগলিক গুরুত্বসহ অন্যন্য বিষয়গুলো দেখে নেওয়া যাক৷ বাংলাদোশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশে৷ বিশেষ করে চীন এবং ভারতের মতো দুই পারমানবিক শক্তিধর দেশের পাশেই৷ একই অবস্থা মায়ানমারের জন্যও৷ আর একারনেই মায়ানমার এবং বাংলাদেশ চীন এবং ভারত এই দুই দেশের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
সেই সাথে এই অঞ্চলের সংঘাতে আমেরিকা সর্বদাই সজাগ দৃষ্টি রাখে৷
যুদ্ধের ক্ষেত্রে মায়ানমার এবং বাংলাদেশ দুই দেশেরই বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে৷ বাংলাদেশ তুলনামুলক ছোট হলেও প্রচন্ড ঘনবসতিপূর্ণ৷ আবার মায়াননার অনেকটা বিশালাকৃতির এবং দুর্গম অঞ্চলে ভরা৷ তাই এই দুই দেশেই যুদ্ধ করাটা খুবই কঠিন কাজ৷
এবারে আসুন সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে তা দেখে নেই৷ গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ২০২১ সালের রেংকিংয়ে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে৷ বাংলাদেশের অবস্থান ৪৫ নাম্বারে৷ আর মায়ানমারের ৩৮ নাম্বারে৷ অর্থাৎ বাংলাদেশের থেকে মায়ানমার কিছুটা এগিয়ে৷ এর অন্যতম প্রধান কারন, মায়ানমারের বিমানবাহিনী বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর থেকে অনেকটা শক্তিশালী৷
পুরো ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
অবশ্য মায়ানমারের থেকে বাংলাদেশের সামরিক ব্যয় অনেক বেশি৷ সামরিক বাহিনীর পিছনের মায়ানমারের বাৎসরিক ব্যয় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ এদিকে বাংলাদেশের সামরিক বাজেট ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছুটা বেশি৷ অর্থাৎ মায়ানমারেের থেকে বাংলাদেশের সামরিক বাজেট প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি৷ যদিও কম সামরিক বাজেট নিয়েও মায়ানমার অনেক বেশি অস্ত্র কিনে থাকে৷
মায়ানমার এবং বাংলাদেশ দুই দেশই প্রধানত চীনের অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল৷ তবে দুই দেশের বিমান বাহিনীতে রাশিয়ার যুদ্ধ বিমানের রাজত্ব রয়েছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে অস্ত্রের জন্য তুরস্ক, ইউরোপ এবং আমেরিকায় নজর দিয়েছে বাংলাদেশ৷ আর মায়ানমার ভারত এবং পাকিস্তান থেকে অস্ত্র কিনছে৷ অর্থাৎ দুই দেশের অস্ত্রগুলোতে প্রযুক্তিগত পার্থক্য তৈরী হতে শুরু করেছে৷ নিশ্চিতভাবেই চীন কিংবা ভারতের অস্ত্রের থেকে ইউরোপসহ পশ্চিমাদের অস্ত্রের মান অনেক ভালো হবে৷
আসুন দুই দেশের কার কাছে কত সৈন্য আছে তা দেখে নেই৷ মায়ানমারের সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত আছে ৪ লাখ ৫ হাজার৷ আর প্যারামিলিটারি আছে ১ লাখ ১০ হাজার৷
এদিকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত সেনা আছে ২ লাখ ৪ হাজার৷ সাথে রিজার্ভ আছে ৬৪ হাজার৷ এছাড়াও বাংলাদেশের ৬৮ লাখ প্যারামিলিটারি রয়েছে৷ বাংলাদেশের কাছেই বিশ্বের বৃহত্তম প্যারামিলিটারি বাহিনী রয়েছে৷ যার মধ্যে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড অন্যতম৷ বাংলাদেশের বিশাল প্যারামিলিটারি থাকাটা মায়ানমারের জন্য দুশ্চিন্তার৷ অতীতে বাংলাদেশের প্যারামিলিটারি বাহিনীর সাথে মায়ানমারের সংঘাতের নজীর রয়েছে৷
মায়ানমারেের সেনাবাহিনার কাছে ট্যাংক আছে ৫৯০টি৷ আর্মার্ড ভেহিকল আছে ১৭শ৷ ছোটবড় আর্টিলারি এবং রকেট প্রজেক্টর্স আছে প্রায় আড়াই হাজার৷
এদিকে বাংলাদেশে কাছে ট্যাংক আছে ৬২০টি৷ আর্মার্ড ভেহিকল আছে দুই হাজার৷ কিন্তু আর্টিলারি আছে ৬শ থেকে ৭শ৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে চীনের তৈরী ৪৫টি অত্যাধুনিক VT 5 ট্যাংক পৌছানোর খবর প্রকাশিত হয়৷ যা বাংলাদেশের সক্ষমতাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে৷ এছাড়াও তুরস্ক থেকে কেনা নতুন মাল্টিপল রকেট লঞ্চার মায়ানমারে বাংলাদেশের আক্রমণ ক্ষমতা বাড়িয়েছে৷
তবে আকাশে মায়ানমার এগিয়ে রয়েছে৷
এই মুহুর্তে মায়ানমারে এবং বাংলাদেশ দুই দেশের কাছেই সবথেকে শক্তিশালী ফাইটার হচ্ছে রাশিয়ান Mig 29. তবে বাংলাদেশের কাছে মাত্র ৮টি মিগ 29 থাকলেও মায়ানমারেের কাছে আছে ৩১টি! অর্থাৎ বাংলাদেশের থেকে মায়ানমারেের মিগ 29 ফাইটার আছে প্রায় চারগুণ বেশি! এছাড়াও বাংলাদেশ এবং মায়ানমারে দুই দেশই ৫০টির মতো F 7 ফাইটার ব্যবহার করে৷ যদিও বাংলাদেশের F 7 বিমানগুলো তুলনামূলক আধুনিক এবং শক্তিশালী৷
মায়ানমারে পাকিস্তানের কাছে ৭টি JF 17 ফাইটার হাতে পেয়েছে৷ এছাড়াও রাশিয়ার কাছে সুখোই Su 30 ফাইটার অর্ডারে আছে৷ অবশ্য মায়ানমারের উপরে জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেথাজ্ঞা রয়েছে৷ তাই রাশিয়া মায়ানমারকে যুদ্ধ বিমানগুলো শেষ পর্যন্ত দিতে পারবে কিনা সন্দেহ৷
তারপরও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিমান বাহিনী মায়ানমারেের বিমান বাহিনীর থেকে তুলনামূলক দুর্বল৷ যদিও বাংলাদেশ MRCA এর জন্য টেন্ডার নিয়েছে৷ MRCA তে বিমান হাতে পেলে রাতারাতি বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে৷
এবারে আসি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নৌ শক্তির দিকে৷ বর্তমানে মায়ানমারেের কাছে ফ্রিগেইট আছে ৫টি৷ আর করভেট আছে ৩টি৷ সম্প্রতি তারা ভারতের কাছে একটি সাবমেরিন পেয়েছে৷
এদিকে বাংলাদেশের কাছে ফ্রিগেইট আছে ৭টি৷ করভেট আছে ৬টি৷ আর চীনের কাছে দুটি সাবমেরিন কিনেছে৷ বাংলাদেএর নৌশক্তি মায়ানমারেের চেয়ে দ্বিগুণ বলা যায়! বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণ নিতে মায়ানমারেকে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকতে হবে৷ তারপরও বাংলাদেশ আরও ৬টি ফ্রিগেই তৈরীর প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷
তবে বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের মধ্যে উত্তেজনা কেবল দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই৷ চীন, রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বও জড়িয়ে পরেছে৷ চীন এবং রাশিয়া দুই দেশের সাথেই সম্পর্ক ভারসাম্য অবস্থায় রেখেছে৷ তবে পশ্চিমা বিশ্ব পুরোপুরি মায়ানমার বিরোধী অবস্থান নিয়ে৷
এছাড়াও মায়ানমারের মধ্যে অভ্যান্তরিন সংকট প্রবল! মায়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই সংঘর্ষ চলছে৷ সর্বশেষ সেনাঅভ্যুত্থানে তা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়৷
প্রিয় দর্শক, বাংলাদের এবং মায়ানামরের মধ্যে সংঘাত হতে কি ফলাফল আসবে বলে আপনি মনে করেন? বাংলাদেশের কি প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ?